Breaking

Friday 30 August 2019

বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায় এর উপন্যাস দৃষ্টি প্রদীপ

দৃষ্টি প্রদীপ এর ছবির ফলাফল
দূষ্টি প্রদীপ
লেখক- পরিচিতি::::
বিভূতিভষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্ম হয় পশ্চিমবঙ্গের  ২৪ পরগনা জেলায় তার মাতুলালয় কাঁচড়াপাড়ায় সমীপবর্তী ঘোষ পাড়া -মুরাতিপুর গ্রামে।তার পিতৃনিবাস একই জেলার ব্যারাকপুর।জন্ম তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ ইং মোতাবেক ২৮ ভাদ্র ১৩০১ বাংলা।তার পিতার নাম মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় শাস্ত্ররী পেশা ছিল কথকতা; মাতা মৃণালিনী দেবী।বিভূতিভূষণের বাল্য ও কৈশোরকাল কাটে অত্যন্ত দারিদ্র্যে।কারণ মহানন্দ কিছু পরিমাণে ভবঘুরে ও উদাসীন প্রকৃতির লোক ছিলেন বলে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারেননি-অর্জন করার চেস্টাও বোধ হয় করেননি।পিতামাতার পাঁচটি সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ই সর্বজ্যেষ্ঠ।তার শিক্ষা শুরু হয় গৃহে পিতার নিকট।কিন্তু তিনি  ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র।যখন তিনি অষ্টম শ্রেনির ছাত্র,সেই সময়ে তার পিতা মারা যায়।নানা দুঃখ কষ্টের মধ্যে তিনি ১৯১৪ সালে ম্যট্রিক পাশ করেন।১৯১৬ সালে তিনি কলিকাতার রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ.পাস করেন এবং১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ঐ কলেজ থেকেই ডিসটিংশনে বি.এ পাস করেন। এর পর তিনি এম .এ ও ল ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন,কিন্তু  লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাটের মোক্তার কারীভূষন বন্দ্যোপাধ্যায় কণ্যা  গৌরী দেবীকে বিবাহ করেন।কিন্তু এর মাত্র এক বছর পরেই গৌরি দেবীর অকালমৃত্যু ঘটে।স্ত্রী মৃত্যুর পর কিছুদিন তিনি প্রায় সন্ন্যসীর জীবন যাপন করেন। এরপর তিনি রমা দেবীকে বিবাহ করেন।বিবাহের সাত বছর পরে তার একমাত্র তারাদাস জন্মগ্রহণ করে।তিনি হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়ায় মাইনর স্কুলে শিক্ষকের চাকুরি গ্রহণ করেন এবং তারপর ২৪ পরগনায় হরিনাভি গ্রামের উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এখানে তার সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়।এখানে তার সাহিত্যি জীবন শুরু হয়।তার প্রথম রচনা “উপেক্ষিতা”নামক গল্প। তিনি চাকুরির কারনে  বাংলা,আসাম,ত্রিপুরা ও আরাকানের বহুস্থানে ভ্রমণ 
করেন।এরপর তিনি জমিদার ভাগলপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হয়ে ঐ শহরের “বড় বাসা” নামক গৃহে অবস্থান করেন। এই ভাগলপুর প্রবাসকালেই তার অমর উপন্যাস “পথের পাচালী” রচিত হয়। এর পর তিনি ঘাটশিলায় একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং  প্রথম স্ত্রী স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশ্যে তার নামকরণ করে ‘গৌরীকুঞ্জ”।তিনি ভ্রমণ করেতে অনেক ভালোবাসতেন। ‘গোরক্ষনী ” সভার ভ্রাম্যমাণ প্রচারকরুপে তিনি যে অভিক্ষতা অর্জন করেছিলেন তা লিপিবদ্ধ হয়ে আছে তার ‘অভিযাত্রিক’ গ্রন্থে।

জীবনে শেষ দশ বছর বিভূতিভূষণ  বন্দ্যোপাধ্যায় তার অতি প্রিয় পিতৃভূমি ব্যারাকপুরে বাস করেছিলেন।এই সময়ে তিনি অজস্র শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের সাহিত্য সৃষ্টি করেন। তিনি অনেক উপন্যাস ও ছোট গল্প রচনা করেন।জীবনের প্রায় শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি সাহিত্য -সাধনায় ব্রতী ছিলেন। ১৯৫০ সালে ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে ঘাটশিলায় স্বগৃহে রাত ৮.১৫ মিনিটে সময় তিনি পরলোকগমন করেন।

#বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা সমূহ:::::::::::::

উপন্যাস::::::: 
*পথের পাঁচালী(১৯২৯)

*অপরাজিত(১৯৩২)

*দৃষ্টি-প্রদীপ(১৯৩৫)

*আরণ্যক(১৯৩৯)

*আদর্শ হিন্দু হোটেল(১৯৪০)

*বিপিনের সংসার(১৯৪১)

*দুই বাড়ি(১৯৪১)

*অনুবর্তন(১৯৪২)

*দেবযান(১৯৪৪)

*কেদার রাজা(১৯৪১)

*অথৈ জল(১৯৪৭)

*ইছামতি(১৯৫০)

*দম্পতি(১৯৫২) 

গল্প-সংকলন::::::::::
*মেঘমল্লার(১৯৩২)

*মৌরী ফুল(১৯৩২)

*যাত্রাবদল(১৯৩৪)

*জন্ম ও মৃত্যু(১৯৩৮)

*কিন্নরদল(১৯৩৮)

*বেনীগির ফুলবাড়ি(১৯৪১)



*নবাগত(১৯৪৪)

*তাল-নবমী(১৯৪৪)

*উপলখন্ড(১৯৪৫)

*বিধু মাষ্টার(১৯৪৪)

*ক্ষণভুঙ্গর(১৯৪৫)

*অসাধারণ(১৯৪৬)



*মুখোশ ও মুখশ্রী(১৯৪৭)

*আচার্য কৃপালনী কলোনী (১৯৪৮)

*জ্যোতিরিঙ্গণ(১৯৪৯)

* কুশল পাহাড়ি(১৯৫০)

*রূপহলুদ(১৯৫৭)

*অনুসন্ধান (১৩৬৬ বঙ্গাব্দ)

*ছায়াছবি(১৩৬৬ বঙ্গাব্দ)

*সুলোচনা(১৯৬৩)

*ভ্রমনকাহিন ও নিনরিপি::::::::::::
*অভিযাত্রিক(১৯৪২)

*স্মৃতির রেখা(১৯৪১)

*তৃণাঙ্কর(১৯৪৩)

*উর্মিমুখর(১৯৪৪)

*বনে-পাহাড়ে(১৯৪৫)

*উৎকর্ন(১৯৪৬)

*হে অরণ্য কথা কও(১৯৪৮)

*কিশোর পাঠ্য:::::::::::::
*চাঁদের পাহাড় (১৯৩৮)

*আইভ্যানহো(১৯৩৮)

*মরণের ডঙ্কা বজে (১৯৫০)

*মিসমিদের কবচ(১৯৪২)

*হীরা মানিক জ্বলে(১৯৪৬)

*সুন্দরবনের সাত বৎসর (১৯৫২)

*বিবিধ::::::::::::::

*বিচিত্র জগত(১৯৩৭)

*টমাস বাটার আত্মজীবনী(১৯৪৩)

*আমার লেখা (বঙ্গাব্দ ১৩৬৮)

*দৃষ্টি প্রদীপ উপন্যাসটির চরিত্র সূমহ:::::::::::
গল্পটির মূল চরিত্র হল জিতু আর তিন ভাই বোনের সমাহার

*জ্যাঠামশায়-হরিবল্লভ

*জ্যাঠাইমা

*নিতাই

*জিতু

*সীতা

*ভূবন

*ভূবনের মা

*মেজো কাকি

*ছোটকাকিমা-নির্মলা

*হীরাঠাকুর

*সলিলদার

*শীতলদা

*মালতী

*হিরণ্ময়ী

*নবীন চৌধুরী

*শৈলদি

*শ্ররামপুরে ছোট-বৌঠাকুরান 

#উপন্যাসটির কাহিনী সারসংক্ষেপ::::::::::::(জিতু মূল কথক)
গল্পটি একটি মধ্যে বিত্ত পরিবার থেকে  একবারে নিশ্বেষ হবার কাহিনী।কাহিনীটি শুরু হয়  কাঞ্চনজাঙ্ঘা নামক স্থান থেকে সেখানে জিতু আর তার দাদা নিতাই ও তার ছোট বোন সীতা থাকতো। তারা বাবা সেখানে একাটি চায়ের বাগানে অফিসার পদে চাকরি করতেন।তার মা ঘরের সব কাজ করতেন। আমরা তোখন খুব বেশী বড় না। কানঞ্চনজাঙ্ঘাই বরফ পরতো আর বেশীর ভাগ সময়ে শীত থাকতো। কানঞ্চজাঙ্ঘাই খ্রিস্টানদের বসবাস ছিলো বেশী।প্রতি দিন  মাকে পড়াতে মিশনারি থেকে মেয়েরা আসতো।মিস নর্টন নামে এক মেয়ে সীতাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখাতো।যেমন সেলাই,কেক তৈরী, পরিষ্কার থাকা প্রভৃতি। জিতুর বাবা  মাঝে মাঝে মদ খেয়ে বাড়িত আসতো। সেই রাতে তাদের সবারই বাড়ির বাইরে থাকতে হতো।কারণ তাহলে সবাইকে মার ধর করতো।বাবর এই মদ খাওয়ার জন্য চা বাগানের চাকরি চলে যায়।শেষে চাকরি হারিয়ে অর্থহীন ভাবে বাংলাদেশে  কলকাতায় আটঘরা বাবর চাচাতো ভাইদের বাড়িতে আমরা আসি।জ্যাঠামশায়রা বেশ অবস্থা সম্পন্ন লোক ছিলো।
তারা আদের প্রথমে ভালো চোখে দেখলেই পরে তারা আদের সাথে দুরব্যবহার করতে শুরু করে।বাবা চাকরির খুজ করতে বেশীর ভাগ সময়ে কলকাতাই থাকতেন।এই দিকে আমাদের যা টাকা ছিল তা সব শেষ হয়ে যেতে থাকে।মা আমাদের শৌখিন জিনিস বিক্রি করে খাবার আনতো এক বেলা খেতাম তো অন্য বেলা না খেয়ে কাটাতে হতো।বাবা শেষ পর্যন্ত চাকরি না পেয়ে পাগল হয়ে যাই। কিছু দিন অসুস্থ থাকার পর এক রাতে বাবা মারা যায়।আমরা জ্যাঠামশয়াদের বাড়ির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি।দাদা আমাদের থেকে বড় হলেও একটু ছোট বচ্চাদের মত স্বাভাব। দাদার অনেক তারাতারি খিদে পাই সে সবার আগে খাবে। তার জন্য জ্যাঠাইমার কছে গাল মন্দ খাবে। আমার মা এই   বাড়িতে জি চাকরের মতো সারাদিন কাজ করতো। তারা আমাদের খ্রিস্টান বলে গৌন্য করতো। কারন মাকে খ্রিষ্টান মেয়েরা পড়াতে আসতো সেই জন্য তারা আমাদের খ্রিস্টান বলতো।সীতা একটু বই পড়তে ভালোবাসতো বলেই তার বলতো মেয়ে মানুষদের এত পড়ালেখা ভালো না তাতে জাত যাই।আসলে আমি হিন্দু ধর্মের সম্পর্কের তেমন কিছু জানি না। কারণ ছোট থেকেই আমি খ্রিস্টানদের মধ্যে থেকেছিতো তাই হিন্দু দেব দেবী সম্পর্কে তেমন জানতাম না । আমি যিশু খ্রিস্ট সম্পর্কে অনেক কিছু জানতাম তার উথান পতন এবং তার অলৌকিক ঘটনা গুলি। তাকে মনে মনে বিশ্বাস করতাম আর মানতাম।কানঞ্চজাঙঘাই থাকার সময় থেকে আমি কিছু অদ্ভত ঘটনা দেখতে পেতাম এবং তা বাস্তবে ঘটে যেতে বিষয়টি অবৈজ্ঞানিক হলে  এটাই বাস্তব। আমি জ্যাঠামশাইদের বাড়ি থাকি আর খুব কস্ট করে লেখাপড়া করি আমার জন্য বছরে বছরে মাত্র ১ টাকা বরাদ্দ হতো পড়ালেখার জন্য।দাদা আর পড়া শোন করলো না।সেই প্রথমে ছোট করে একটি দোকান দিয়েছিলো কিন্ত বাকির কারণে তা বন্ধ হয়ে যাই।তার পর দাদা বাতাসার কারখানাই শ্রমিক হিসাবে চাকরি করে সেখান থেকে সামান্য কিছু অর্থ পেতো। আর বাকি অর্থ মার কাছে পাঠাতো।আমরা যখন বাংলাদেশে  প্রথম আসি তখন সমতল ভূমি দেখে আকস্মিক  হয়। কারণ তো  আজন্ম এই পর্বত ,জনজঙ্গল শীত , কুয়াশা, বরফ-পড়া দেখে আসছি - কল্পনাই করতে পারিনে   এ  সব ছাড়া আবার দেশ থাকা সম্ভব তা আমার জানা ছিলো না।আমরা যে বাড়ি তে থাকি তা আমার বাবার খুড়তুতো-জাঠতুতো ভাই। জ্যাঠামশায়ের অবস্থা খুবই ভালে- পাটের বড় ব্যবসা আছে, দুই ছেলে গদিতে কাজ দেখে,ছোট একটি ছেলে এখানকার স্কুলে পড়ে, আর একটি মেয়ে ছিল, সে আমাদের আসবার আগে বসন্ত হয়ে মারা গিয়েছে। মেজকার তিন মেয়ে ছেলে হয়নি,বড় মেয়ে বিয়ে হয়েছে, আর দুই মেয়ে ছোট। ছোটকাকার বিয়ে হয়েছে বেশি দিন নয়- ছেলে হয়নি,বৌ এখানে নেই,ছোটকাকা অত্যন্ত রাগী লোক,বাড়িতে সর্বদা ঝগড়াঝাটি করেন,গানবাজনার ভক্ত  ওপরের ঘরে সকাল সন্ধ্য নেই হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন ।হীরুকে এ -গায়ে আসা পর্যন্ত দেখছি।কালো কালো চেহারা,খোচা ,খোচা একমুখ দাড়ি পরনে থোকে আধময়রা থান, খালি পা,কাধে ময়লা চাদর,তার ওপরে একখানা ময়লা গামছা ফেলা।নিজের ঘরদোর নেই,লোকের বাড়ি বাড়ি খেযে বেড়ানো তার ব্যবসা।এই হীরুঠাকুরের সাথে দাদার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো।একদিন দাদা অসুস্থ হীরুদাকে বাড়িতে নিয়ে আসলো এই জন্য জ্যাঠামার কাছে অনেক গাল মন্দো খেতে হয়েছে দাদাকে।শেষ পর্যন্ত হীরুদার স্থান হলো বাড়ির বাইরে।সেই অনেক জ্বর কাশি অবশেষে রাতের শেষ প্রহরে হীরুদা মারা গেলো।হীরুদা মারা যাওয়ার আগে আমি সেই অদ্ভদ ঘটনার সম্মখীন হয় সে আমাকে বলছে যে জ্যাঠামশাই আমাকে শেষ করে দিয়েছে।পরে আম জানতে পারলাম যে হীরুদা পৈতৃক জমিজমা ও দুখানা আম- কাঠালের বাগান বন্ধক রেখে জ্যাঠমশায়ের কাছে কিছু টাকা ধার করে এবং শেষ পর্যন্ত হীরুঠাকুর সে টাকা শোধ না করার দারুণ জ্যাঠমশাই নালিশে নিলাম সব বন্ধকী বিষয় নিজেই কিনে রাখেন। এর পর হীরু ঠাকুর আপসে কিছু টাকা দিতে সম্পত্তিটা ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলো জ্যাঠামশায় রাজি হন নি।সেই থেকে হীরুদা ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে।জ্যাঠাইমা এ সংসারের কত্রী,কারণ জ্যাঠামশাই রোজগার করেন বেশী।ফর্সা মোটাসোটা এক-গা গহনা,অল্ঙ্কারে পরিপূর্ন- এই হলেন জ্যাঠাইমা।এ-বাড়িতে নববধূরুপে তিনি আসবার পর থেকেই সংসারের অবস্থা ফিরে যায়্ তার আগে এদের অবস্থা খুব ভালো ছিলো না। তাই নিজেকে ভাবেন ভাগ্যবতী। এই বাড়িতে সবাই তিার সেবা দাসি শুধু ছোট কাকিমা বাদে ।কারন ছোট কাকিমা বাদে এইজন্যে যে তিনি বড়মানুষের মেয়ে-তার উপর জ্যাঠাইমার প্রভুত্ব বেশী খাটে না।আমি হিন্দু ধর্মের চৈতন্যদেবের অনেক কথাই পড়েছি সে তো হিন্দু ধর্মের এত আচার আচারনের কথা লেখে নিই।কেনো যে তারা এতো হিন্দু আচার আচরণ মানে তারাই ভালো জানে। আমি হিন্দু হলে যিশু খ্রিস্টকে মনে প্রানে বিশ্বাস করি।
আমি ম্যাট্রিক পাশ করে শ্রীরামপুর কলেজ ভর্তি হলাম। নবীন চৌধুরী ভগ্নীপতির বাড়ি অর্থাৎ নবীন চৌধুরীর বড় মেয়ে  শৈলবালার শ্বশুরবাড়ি শ্রীরামপুরে।ননীর যোগাড়যন্ত্রে তাদের শ্বশুরবাড়িতে আমার থাকবার ব্যবস্থা হল।সেখানে সে বাড়িতে ছোটবৌঠাকুরন থাকতো তার সাথে মনের একটা মিল ছিলো আমার এবং কেন জানি একটি অদৃষ্ট ভালোবাসা ছিলো ।চিঠিতে দুই একবার কথা হয়েছে বটে কিন্তু তা আর মায়া না বাড়িয়ে আই.এ পাস করার পর সেখানে চলে আসতে হয় আমাকে।সেখানে শৈলদি  আমাকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে । শৈলদি জামাইয়ের সাহায্যে সহযোগিতাই একটি চাকরি জোটে গেলো কপালে।সেখানে চাকরি চলাকালিন শুনলাম জ্যাঠামশাই  সীতার বিয়ে ঠিক করেছে। অনেক বয়স্ক একটি লোক যার আগে একটি বৌ ছিলো তার সাথে সীতার বিয়ে ঠিক করে। সীতা আর জীবনে সুখ দেখলো  কোথাই  ওর আর দুখের সীমা থাকলো না। সীতার জন্য আমি কিছুই করতে পারলাম না।অবশেষে সীতার বিয়ে হয়ে যাই। একদিন দাদার একখানা চিঠি পেয়ে অবাক হলাম। দাদা যেখানে কাজ করে, সেখানে এক গরিব ব্রহ্মাণের একটি মাত্র মেয়ে ছিলো,ওখানকার সবাই মিলে ধরে পড়ে মেয়েটির সঙ্গে দাদার বিয়ে দিয়েচে।দাদা নিতান্ত ভালোমানুষ,যে যা বলে কারো কথা ঠেলতে পারে না।কাইকে জানানো হয়নি,পাছে কেউ যদি বাধা দেয়।জ্যাঠামশায়ের ভয়ে বাড়িতে বৌ নিয়ে যেতে সাহস করছে না। এর পর  আমি চাকরি  ছেরে দেই   কিছুদিন সন্ন্যাসীদের মতো যেখানে সেখানে ঘুরতে থাকি। হঠাৎ আমি বোঝতে পারলাম যে সেই অদ্ভদ ক্ষমতাই দেখেতে পেলাম যে মা অসুস্থ । ঠিক আমি সেই সময় আটঘরাই দিকে রওনা হলাম।আমি আটঘরা বাড়ি গিয়ে পৌছালাম তখন দিখি মা  অসুস্থ ঘরে শুয়ে  আছে মা আমাকে দেখে বলো কে নিতাই আমি বললাম না জিতু । আমি মায়ের জন্য কিছু আঙ্গুর নিয়ে এলাম মাকে বলাম খেতে। একটু পর সীতা আসলো শ্বশর বাড়ি থেকে।তার পর দাদা আর বৌদি  আসলো । বৌদিকে দেখেই বোঝলাম সেই খুই সরল আর শান্ত স্বভাবে। সকাল বেলা আটটা-নয়টার পর  থেকে মার অবস্থ খুব খারাপ হল।এর মধ্যে আমি শৈলদির নিকট থেকে কিছু ধার নিয়ে আকে ডাক্তার দেখাই ছিলাম কিন্তু অবশেষে বেলা তিনটার সময় মারা গেলেন।মায়ের মৃত্যু পর আমদের ঘরের চাবি ছোটকাকিমার হাতে তুলে দিয়ে এলাম। এই বাড়িতে এক মাত্র ছোট কাকিমাই পরিবর্তন হয়েছে।সে আমাদের  এই বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলো। মাস পাচ- ছয় ঘুরতে ঘুরতে একবার গেলাম দাদার বাড়িতে। সেখানে দেখলাম দাদা আর বৌদি তাদের বাচ্চা নিয়ে বেশ সুখে আছে। সেখান থেকে বেরিয়ে কলকাতাই গেলাম  চাকরির খুজেই। কিন্তু চাকরি না পায়ে বিভিন্ন জায়গায় গুরে বেরাতে লাগলাম। কিছুদিন ঘুরাঘারি করার পর দুপুরে সন্ধান মিলল ক্রোশ-চারেক দূরে দ্বারবাসিনী গ্রামে একটি প্রসিদ্ধ আখড়াবাড়ি আছে,সেখানে মাঝে মাঝে ভলো বৈঞ্চব সাধু আসেন। গায়ের বাইরে আখিড়াবাড়ি, সেখানে থাকবার জায়গাও মেলে।সন্ধ্যার সামান্য আগে দ্বারবাসিনীর আখড়াবাড়িতে পৌছলাম। সেখানে এসে একটা  মেয়েকে দেখে আমার হৃদয়ে শীতলতা বৃদ্ধি পায়। মেয়েটির শান্তসুর জেনো আমাকে অচেনা মোহ দেখাতে শুরু করে। মেয়ে এই আখরাই খাবারের জন্য অনুরোধ করতে ছিলো যে কে কি খাবে।পরে এই আখরার নাম জানতে পেলাম  লোচনদাসের আখড়া। আর মেয়েটির নাম মালতী। তার বাব ও এই আখরার জন্য কাজ করেছেন তিনি চার বছর আগে মারা গেছেন। আখরার পাশে একটি  বিঞ্চুমন্দির  ছিলো সেটার কাজ এখনো শেষ হয় নি।এখানে মালতীর অভিবাক হিসেবে ছিলেন উদ্ববদাস। মালতী এই আখড়ার জন্য সাড়া দিন কাজ করতো রান্নবান্ন,কাপড় চোপড় ধুয়ে দেওয়া ।আস্তে আস্তে মালতীর সাথে কথা বলতে বলতে তার সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক ঘরে উঠলো। একদিন তাকে আমি বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে বিয়ে করে আমি তোমাকে নিয়ে জেতে চাই । মালতী বলো সেই হয়তো আমকে ভালোবাসে কিন্তু আখড়া ছেরে জাবে না।তখন আমি সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলাম । এরই মধ্যে এক বছর কেটে গেলো,শ্রাবণ মাস হঠাৎ দাদার শালার একখানা চিঠি পেলাম খলকাতা থেকে।দাদার বড় অসুখ চিকিৎসার জন্যে তাকে আনা হয়েছে ক্যাস্মেল হাসপাতালে। সামান্য ব্রণ থেকে দাদার মুখে হয়েছে ইরিসিপ্লাস,আজ সকালে অস্ত্র করা হয়ে গিয়েছে। দাদ আমাকে হাত ধরে বলো তোর বৌদি বড্ডো  ছেলে মানুষ দেখে রাখিস।সেই দিন আমি সারা রাত জাগলাম । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ভোর হবার দেরি নেই আমি দেখলাম আমার মৃত্যু মা,আর বাবা পশে দাড়ানো।আমি সেই বোঝতে পরলাম দাদার আর বেশী খোন বাচতে পারবে না। তার কিছু কখন পর দাদা মারা গেলো।বৌদিকে অনেক কস্টে সংবাদ টা দিলাম।সংসার চালানোর জন্য দাদর সেই বাতাসা কারখাই চাকরি পেলাম। কিন্তু হঠাৎ বৌ দিদি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছোট বাচ্চাটা ছিলো মাত্র ১০ মাস বয়েসের। তাকে লালন পালন করতে হতো। কিছুদিন পড় বৌ দিদি সুস্থ হলো। তার পর বৌদিকে আপাতত কালীগঞ্জে রেখে আমি চলে গেলাম কমলাপুরে গেলাম। সেখানে সবার পরামর্শে  একটি স্কুল খুললাম । খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র- ছাত্রী জুটে গেলো। সেখানে একটি ছাত্রী ছিলো হিরন্ময়ী নামে সে সবার থেকে একটু বড়। তাকে দেখ আমার মালতীর কথা মনে পরে গেলো। অবশ্যই পরে আমি জানতে পারি বছর খানেক আগে মালতী  মারা গিয়েছে। শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।যাই হক হিরন্ময়ী ছিলো একটু রাগী সভাবের মেয়ে। তাকে আমি কনো মতে কথা শুনাতে পাড়তাম না।অবশেষে আমি বলেছে সে যেনো আমার এখানে পড়তে না আসে। এই দিন সে আমার বাড়িতে সন্ধ্যাই এলো এই দেখি অন্য হিরন্ময়ী সে আমার এখানে এসে আমার খাবার তৈরী করে দিতো।সে আমাকে ভালোবাসলেই আমি তাকে ছাত্রেই মতো দেখতাম। এই ভাবে জীবনের গতি দ্ধারা চলতে থাকে।::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::



 
 

 
 


No comments:

Post a Comment