Breaking

Wednesday 23 October 2019

সরিষা ফুল থেকে মধু তৈরী

সম্পর্কিত ছবি
সরিষা ফুল
সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ মধু সংগ্রহ  করা যায়।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা। বর্তমান মান্দা উপজেলার ভারশো, বাঁকাপুর, কৈইকুড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলের মাঠে সরিষা ফুল থেকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষীরা। কিন্তু  কৃষকদের মাঝে অনেক ভ্রান্ত রয়েছে।সরিষা  ক্ষেতে মৌমাছি বসালে ফসলের ক্ষতি হয়।  ফলে অনেক স্থানে মৌচাষীদের বসতে দেয়া হয় না। এমনকি সরিষা ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ফলে ফুলে মৌমাছি বসায় মৌমাছি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।সুতরাং সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ হলে ফসলের জন্য আরো উপকার হয়।যেমন-

  • ক্ষেতে কীটনাশকের স্প্রে দিতে হয় না।
  • ফুলের পরাগায়ণ হয়।
  • রোগ বালাই কম হয়।
  • ফলন ভালো হয়।
সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকলে তা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফলন বাড়ে।যে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি নেই সেখানে সরিষার ফলন কম হয়।একদিকে সরিষা থেকে যে মধু পাওয়া যাবে তা বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান অন্যদিকে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকায় সরিষার ফলন বেশি।
সরিষা ফুল এর ছবির ফলাফল
মধু সংগ্রহের জন্য মৌবাক্স
সরিষা ক্ষেতের পাশেই সারি বদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। হাজার হাজার মৌমাছি হলুদ রঙের সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করছে। ৭/৮ দিন পর পর ওই সব বাক্স থেকে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি বাক্সে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৌমাছি আর একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে। রানী মৌমাছি ডিম দেয়। মৌমাছির নাম ‘এফিস মিলিফেরা’ জাতের মাছি। সারাদিন মাছি গুলো সরিষার ফুলে পরাগায়ন ঘটায় এবং মধু সংগ্রহ করে। এতে প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরের সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করে মাছি গুলো। মোমের ফ্রেমে মাছি মধু জমা করে আর রানী মাছি ডিম দেয়। যখন ফ্রেমগুলো মধুতে ভরে যায় তখন বাক্স থেকে ফ্রেম গুলো খুলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাছি মুক্ত করা হয় এবং ড্রামের মধ্যে ঘুরাইয়া (ঘুর্ণায়মান ড্রাম) মধু পৃথক করে নেওয়া হয়। এতে প্রতি বাক্স থেকে ৬/৭ লিটার মধু বের করা যায়। খামার করতে খরচের মধ্যে একটা বাক্স ৬০০ টাকা, একটা মোমের ফ্রেম ৫০০ টাকা। বাক্সভর্তি মৌমাছি নারায়নগঞ্জ কনিতে পাওয়া যায়।। সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা এসব মধু ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা লিটারে বিক্রি করা যায়। এ বছর তিনি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।


মৌমাছি পালনের সরঞ্জামঃ মৌমাছি পালনের জন্য স্থায়ী ও কাঁচামাল উভয় ধরণের জিনিস দরকার হবে।
উপকরণ পরিমাণ প্রাপ্তিস্থান
কাঠের বাক্স ২টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
টুল বা স্ট্যান্ড ২টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
মধু সংগ্রহের মেশিন ১টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
ধোঁয়া যন্ত্র ১টি বিসিক, প্রশিকা বা মৌচাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান
মুখোশ, গ্লাভস্ বা হাত মোজা ১টি ঔষধের দোকান
হাতুড়ী ১টি হার্ডওয়ারের দোকান
নেট বা জাল হার্ডওয়ারের দোকান
বালতি হার্ডওয়ারের দোকান
কাঁচের বোতল/কৌটা ৫/৬টি বাসন-পত্রের দোকান
জলকান্দা ৪টি মাটির জিনিসপত্রের দোকান
ছুরি বা চাকু ১টি স্টেশনারি দোকান








মৌমাছি ধরা ও বাক্সে রাখার নিয়ম


সম্পর্কিত ছবি
মৌবক্স


  • সাধারণত মৌমাছিরা ছাদের কার্নিসের নিচে, গাছের ডালে, অন্ধকার গর্তে চাক বাঁধে। এসব স্থান থেকে মৌমাছি সংগ্রহ করে মৌ-বাক্সে রাখতে হবে।
  • সন্ধ্যাবেলা শুকনা গোবর, ছেড়া চট, কাঠের গুঁড়া দিয়ে মৌচাকে ধোঁয়া দিতে হবে।
  • ধোঁয়া পেয়ে মৌমাছি চাক থেকে সরে যাওয়ার পর মৌচাক ছুরি দিয়ে কয়েক টুকরা করে কাটতে হবে।
  • মৌচাকের একটি টুকরা একটি কাঠের ফ্রেমে রাখতে হবে।
  • কাঠের ফ্রেমে চাকের কাটা অংশ ধরে রাখার জন্য সুতা দিয়ে বাঁধতে হবে।
  • চাক বাঁধা কাঠের ফ্রেমটি আতুর ঘরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • এভাবে চাকের কাটা অংশগুলো একেকটি কাঠের ফ্রেমে সুতা দিয়ে আটকিয়ে আতুর ঘরের খোপ গুলোতে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • মৌচাকের যে অংশে মধু বেশি আছে সে অংশ আতুর ঘরে ঢুকানো যাবেনা।
  • চাক থেকে মৌমাছি তাড়াবার সময় মৌমাছিরা আশেপাশে উড়ে এসে বসলে তখন মৌমাছিগুলোকে হাত বা কাঠ দিয়ে মৌ-বাক্সের ভিতর ঢুকাতে হবে। যত সম্ভব মৌমাছি এবং রাণী মৌমাছি বাক্সের ভিতর দিতে হবে।
  • এরপর গাছের ডাল থেকে কেটে নেয়া চাক নষ্ট করে ফেলতে হবে।






মৌমাছির রোগ ও চিকিৎসাপূর্ণবয়স্ক মৌমাছির আমাশয় ও পক্ষাঘাত এ দু’ধরণের রোগ হয়। আমাশয় হলে মৌমাছি ঘন ঘন হলুদ রঙের পায়খানা করে দূর্বল হয়ে যায়। পক্ষাঘাত হলে মৌমাছির পা, পাখা নাড়াতে পারেনা। উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
প্রতিকার

  • আক্রান্ত কলোনি ভালো কলোনি থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত কলোনিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অন্য কলোনিতে ব্যবহার করা যাবে না।
  • নিয়মিত কলোনি পরিদর্শনের মাধ্যমে কলোনির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।
  • কলোনিতে প্রচুর খাদ্য এবং পোলেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  • আমাশয়ের ব্যবস্থার জন্য অক্সি-টেট্রা-সাইক্লিন পাউডারের সাথে চারগুণ বেশি পরিমাণ চিনি মিশিয়ে একটানা ৭ দিন মৌমাছিদের খেতে দিতে হবে।








মৌচাক সংগ্রহের পদ্ধতি
  • মৌচাকের উপর মোমের সাদা স্তর পড়লে বুঝতে হবে মৌচাক মধুতে ভরে গেছে। তখন শুকনা গোবর, খড় বা নাড়া, ছেড়া জামা বা চট জ্বালিয়ে মৌচাকের মধুঘরের উপর হালকা ধোয়া দিতে হবে।
  • মধুঘর থেকে সব মৌমাছি যখন সরে গিয়ে পাটাতনের উপর বসবে তখন পুরো মৌচাকটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • একটু একটু করে কাপড় সরাতে হবে।
  • মধুঘর থেকে ফ্রেমসহ একটা একটা করে মৌচাক বাইরে বের করে আনতে হবে।
  • মৌচাক বের করার সময় চাকে মৌমাছি থাকলে ব্রাশের সাহায্যে আতুরঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • অনেক সময় মৌমাছি মধুঘরে থেকে যায়। এক্ষেত্রে কুইন গেটের সামনে মধুঘর থেকে বের করা মৌচাক রেখে দিতে হবে।
  • এর ফলে মৌমাছি ঐ চাকে গিয়ে বসবে। এরপর মৌচাকে হালকভাবে টোকা দিলে মৌমাছি কুইন গেট দিয়ে আতুরঘরে ঢুকে যাবে।


মধু সংগ্রহ করা পদ্ধতি
  • মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করতে হবে।
  • মধু সংগ্রহের জন্য ২টি ছুরি, পরিষ্কার কাপড়, গামলা বা বালতির দরকার হবে।
  • প্রথমে একটি ছুরি ফুটন্ত গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • ছুরিটি পানি থেকে তুলে পরিষ্কার কাপড়ে মুছে নিতে হবে।
  • মধুঘর থেকে ফ্রেমসহ মৌচাকটি বের করতে হবে।
  • পরিষ্কার গামলা বা বালতির উপর মধুভর্তি চাকটি রাখতে হবে।
  • ছুরি দিয়ে মৌচাকের মধু কোষের উপর থেকে মোমের সাদা স্তরটি কেটে নিতে হবে। অপর পাশের মধু কোষের উপর থেকেও একইভাবে মোমের স্তরটি কেটে নিতে হবে।
  • এরপর মধু নিষ্কাশন যন্ত্রে ফ্রেমসহ চাকটি বসিয়ে যন্ত্রটির হাতল আস্তে আস্তে ঘুরাতে হবে।
  • ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যে মৌচাকের মধু বের হয়ে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রে জমা হবে।
  • যন্ত্রটিতে বেশি মধু জমা হলে মধু বের হওয়ার কলটি খুলে দিতে হবে।
  • গামলা বা বালতিতে মধু



মধু পরিষ্কার ও সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
  • সংগ্রহ করা মধু ছাকনী দিয়ে ছেকে নিতে হবে।
  • এরপর মধু শোধনের জন্য একটি এ্যালুমিনিয়ামের বড় ডেকচি বা কড়াই নিয়ে তাতে পানি ঢালতে হবে।
  • কড়াইয়ের মধ্যে কয়েকটি ইট বা পাথর বসিয়ে তার উপর পাত্রটি বসাতে হবে।
  • পাত্রটি এমনভাবে বসাতে হবে যেন পানি ও মধুর উচ্চতা সমান থাকে।
  • এরপর মধুর পাত্রসহ ডেকচিটি চুলার উপর বসিয়ে দিয়ে একটানা ৩০-৪০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে।
  • মধুর উপর গাদ বা সাদা ফেনা পড়লে চামচ দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।
  • এরপর ডেকচিটি চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
  • মধু ঠান্ডা হলে ছেঁকে পরিষ্কার কাঁচের বৈয়ামে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। এই মধু বিশুদ্ধ এবং অনেকদিন সংরক্ষণ করা যাবে।
    মৌচাকথেকে মধু সংগ্রের জন্য ঘূর্নমান মেশিন 






No comments:

Post a Comment