Breaking

Wednesday, 16 December 2020

ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী

বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসু
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু(১৮৮৯-১৯০৮)

 পরিচয়ঃ

ক্ষুদিরাম বসুর ১৮৮৯ সালে মেদেনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মাতার নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী আর পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু।তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার।। তার মায়ের তিন কন্যার পর চতুর্থ সন্তান তিনি। তার দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (তার মানে চালের খুদ)বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। তার যখন ছয় বছর বয়স তখন তার মাতা ও পিতা মারা যায়। এরপর তার বড় বোন তাকে লালন পালন করেন।  তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই-স্কুলে  ভরতি করে দেন। এরপর ১৯০৪ সালে  ক্ষুদিরাম তমলুক থেকে মেদেনীপুর চলে আসেন আর সেখান থেকে কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন।

ক্ষুদিরামের বৈপ্লবিক চিন্তাধারাঃ

 মেদিনীপুরে ক্ষুদিরামে বিপ্লবী জীবন শুরু।। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তাঁরই নির্দেশে "সোনার বাংলা" শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬ সালে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান।১৯০৭ সালে হাটগাছায় ডাকের থলি লুট করা এবং ১৯০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর নারায়ণগড় রেল স্টেশনের কাছে বঙ্গের ছোটলাটের বিশেষ রেলগাড়িতে বোমা আক্রমণের ঘটনার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। একই বছরে মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যপন্থি রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

 মুজাফফরপুরে কিংসফোর্ডকে হ্যাতার চেষ্টাঃ

কিংসফোর্ডকে প্রথমে হেমচন্দ্রের তৈরি করা বোমা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।কিংসফোর্ডের নিরাপত্তার জন্য তার পদউন্নতি করে তাকে সরকার বিহারের মুজাফফরপুর জেলের বিচারপতি হিসাবে বদলি করেন। আর সেই সময় তার সঙ্গে যে আসবাবপত্র আনা হয় সেই সাথে বোমা নিয়ে আসে কন্তি সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

সংগঠন থেকে কিংসফোর্ডকে হত্যা জন্য দুইজন সদস্যেকে দায়িত্ব দেয় হয় তারা হলো প্রফুল্ল চাকি আর ক্ষুদিরাম বসু।পুলিশ কিংসফোর্ডকে নিরাপত্তার জন্য তার বাড়িতে চার জন পুলিম মোতায়েন করেন।ইতিমোধ্যে প্রফুল্ল চাকি আর ক্ষুদিরাম বসু নিজেদের নাম পরিবর্তন করে কিশোরীমোহনের ধর্মশালাই আশ্রয় নেই। এদিকে সিআইডি বিভাগ থেকে জানো হয় যে কোন বিপ্লবী নেতা মুজাফফরপুর যাই নিই।প্রফুল্ল চাকি আর ক্ষুদিরাম তিন সাপ্তাহ ধরে নানা পরিকল্পনা করে যে কি ভাকে কিংসফোর্ডকে হত্যা করা যায়। তারা ছাত্র পরিচয় দিয়ে মুজাফফরপুর পার্কের সামনে অপেক্ষা করছিলো কারন কিংসফোর্ড মাঝে মাঝে এর উল্ট দিকের ক্লবে আসে।

প্রিঙ্গল কেনেডি নামে এক ব্রিটিশ তার মেয়ে আর স্ত্রী এবং কিংসফোর্ডের স্ত্রী এক সঙ্গে ব্রিজে খেলছিলো কিছুখন পর তারা বাড়ির দিকে আসে তখন রাত ৮.৩০ বাজে যখন কিংসফোর্ডের এর গাড়ির মতো দেখতে কেনেডি মহিলা আর তার মেয়ে সেই গাড়িতে আসছিলো তখন প্রফুল্ল চাকি আর ক্ষুদিরাম বসু সেই গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করে কিংসফোর্ডের গাড়ি মনে করে। বোমা মারার ফলে কেনেডি মহিলা আর তার মেয়ে মারা যায়।

এই খবর সারা শহর জেনে যায় তখন আততায়িকে ধরার জন্য সারা শহরে  পুলিশ মোতায়েন করা হয়।ক্ষুদিরাম সারা রাত হেটে ওয়াইনি নামে এক স্টেশনে পৌছান সেখানে চা খেতে বসেন তখন দুইজ কনস্টেবলের সাথে তার লড়াই হয় অবশেষে ক্ষুদিরাম ধরা পরে।

অন্যদিকে প্রফুল্ল চাকি নানা রকম প্রতিবন্ধকতার পর কলকাতয়  যাওয়ার জন্য  ট্রেনে উঠেন সেখানে পরিবহন করছিলো নন্দলাল নাকে একজন পুলিশ প্রফুল্ল যখন শিমুরঘাট রেল স্টেশনে পানি খাওয়ার জন্য নামে তখন নন্দলাল তাকে ধরে ফেলেন  ইতিমোধ্যে নন্দলাল তার কোথপকোথন থেকে বুঝতে পেরেছিলের সেই প্রফুল্ল চাকি।প্রফুল্ল চাকি তার রিভালভার দিয়ে লড়াই করতে চেয়েছিলো কিন্তু দেখে তার রিভালভারে একটি গুলি আছে তখন সেইি একটি গুলি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়।

ক্ষুদিরামকে মুজাফফরপুর থেকে শহরে আনা হয় ।ক্ষুদিরামকে দেখেতে সারা শহরের মানুষএকত্র হয়েছিলো। বিচারক ছিলেন জনৈক ব্রিটিশ মি. কর্নডফ এবং দুজন ভারতীয়, লাথুনিপ্রসাদ ও জানকীপ্রসাদ। তাকে ফাসির রায় দেয়া হয়। ফাসির কথা শুনে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। তখন কর্নডফ তাকে প্রশ্ন করেন তোমকে যে ফাসিতে মরতে হবে সেটা বুঝে কি না। ক্ষুদিরাম আবার হাসে। তার ফাসি দেয় হয় ভোর ছয়টাই  ১৯০৮ সালে ১১ অগাস্ট। ক্ষুদিরাম ফাসির মঞ্চে হাসিমুখে ছিলেন।

ক্ষুদিরামকে যে কারাগারে রাখা হয়েছিলো

ক্ষুদিরামকে যে কারাগারে রাখা হয়েছিলোঃ

 ১১ আগস্ট, জেলের ভিতরে ডানদিকে একটু দূরে প্রায় ১৫ ফুট উঁচুতে ফাঁসির মঞ্চ। দুই দিকে দুই খুঁটি আর একটি মোটা লোহার রড যা আড়াআড়িভাবে যুক্ত তারই মাঝখানে বাঁধা মোটা একগাছি দড়ি ঝুলিয়া আছে। তাহার শেষ প্রান্তে একটি ফাঁস। এরপরেই ক্ষুদিরামকে নিয়ে আসে চারজন পুলিশ। তথ্য বলছে, ক্ষুদিরামই হাঁটছিলেন আগে। যেন তিনিই সেপাইদের টেনে আনছেন। এরপর সে উপস্থিত আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে হাসে। এরপর ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত হলে তার হাত দুটি পিছন দিকে এনে বেঁধে দেওয়া হয়। জল্লাদ তখন শেষ মুহূর্তের কাজ করছিল। গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো মাত্রই দামাল ছেলের প্রশ্ন “ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?” – এটাই তার শেষ কথা। চমকে দিয়েছিল জল্লাদকে।

ক্ষুদিরামের চারিত্রিক বৈশিষ্টঃ

 ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিল প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য কাজ করবার। তার স্বভাবে নেশার মতো অত্যন্ত প্রবল ছিল সৎসাহস। আর তার ছিল অন্যায় অত্যাচারের তীব্র অনুভূতি। সেই অনুভূতির পরিণতি বক্তৃতায় ছিলনা, বৃথা আস্ফালনও ছিলনা; অসহ্য দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে, প্রতিকার অসম্ভব জেনেও শুধু সেই অনুভূতির জ্বালা নিবারণের জন্য, নিজ হাতে অন্যায়ের প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে প্রতিবিধানের চেষ্টা করবার।ওয়াইনি রেল স্টেশনটা বর্তমানে নাম বদল করে হয়েছে ক্ষুদিরাম বোস পুসা স্টেশন। ক্ষুদিরাম এর মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে  অনেক কবিতা গান রচিতা হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম তাকে নিয়ে  কবিতা রচনা করেছে। একটি গান ছিলো-এক বার বিদায় দেনা মা ঘুরে আসে।


 

 


 

1 comment: