Breaking

Saturday 2 January 2021

জাফরান মসলা

 

জাফরান মসলা

জাফরান  এর পরিচিতিঃ

 

জাফরান অত্যন্ত একটি দামি মসলা। ইহাকে রেড গোল্ড ও বলা হয়ে থাকে।জাফরান মসলা টি জাফরান ফুলের গর্ভদন্ড (স্টিগমা) থেকে সংগ্রহ করা হয়। জাফরান ফসলের আদিস্থান গ্রীসে।প্রাচীন যুগে জাফরান সম্ভ্র্রান্ত পরিবার ব্যবহার করে থাকতো।আফগানিস্থান, ইরান, তুরস্ক, গ্রীস, মিশর, চীন এ সব দেশে কম বেশি জাফরানের চাষ হয়ে থাকে।ভারতের কাশ্মীরে ও স্পেনে ব্যাপক জাফরান চাষ হয়। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় জাফরান স্পেন থেকে বেশী রপ্তানী করা হয়। কারন স্পেনে বেশী পরমিানের জাফরান উৎপাদন হয়। মোট চাহিদার ৭০ ভাগ আসে স্পেন থেকে।

জাফরান শব্দের উৎপত্তিঃ

 

জাফরান এর ইংরেজি  শব্দ   "SAFFRON"(সাফরান)।জাফরান এর বৈজ্ঞানকি নাম "CROCUS SATIVUS" ।এটি ১২ শতকের প্রাচীন ফরাসি শব্দ সাফরান থেকে উৎপত্তি হতে পারে, যা ল্যাটিন শব্দ  "SAFRANUM" থেকে উৎপত্তি হয়েছে যা আবার আরবী শব্দ জাফরান থেকে এসেছে আবার ফার্সি শব্দ জার্পারান থেকে এসেছে যার অর্থ (সুবর্ণ পাপড়ি দিয়ে ফুল)।

Facebook
জাফরান গাছ ও ফুল

জাফরান গাছ ও ফুলঃ

 

জাফরান গাছের মোথা অনেকটা পিয়াজের মতো। জাফরানের ফুলের পাপড়ি বেগুনি রঙের হয়।নতুন জমিতে জাফরান চাষ করলে প্রথম বছর ৫০ থেকে ৬০ ভাগ গাছে ফুল আসে। এর পরের বছর আসে ২ থেকে ৩ টি ফুল আর পরবর্তীতে আসে ৫ থেকে ৭ টি। জাফরান গাছের কোন বীজ হয়না। কান্ড থেকে গাছ উৎপাদন করা হয়। প্রতিটি ফুলে থাকে ৩ টি করে গর্ভদন্ড বা স্টিগমা।১ বছর বয়স্ক গাছ থেকে রোপণ উপযোগী মাত্র ২ টা মোথা পাওয়া যায়। তবে ৩-৪ বছর পর একেক গাছ থেকে ৫-৭ টা মোথা পাওয়া যেতে পারে। এই ভাবে জাফরানের বংশ বিস্তার করা হয়।দন্ডের রঙ হলুদ এবন কমলা মিশ্রনে জাফরা‌নি বর্ণের হয়। প‌রিণত ফুল শুকা‌লেই এর দন্ড মশলা হি‌সে‌বে ব্যবহৃত হয়। 

 

জাফরান মসলার উপকারিতাঃ 

 

*খাবার সু-স্বাদ এর জন্য জাফরান মসলা ব্যবহার করা হয়। যেমন বিরিয়নী, কাচ্চী,র্জদা আরো নানা ধরনের খাবারের সাথে জাফরান মসলা ব্যবহার করা হয়।

  *মুখমন্ডল আকর্ষণীয় করতে ও ত্বকের উজ্জ্বল রং আনার জন্য স্বচ্ছল সচেতন রমণীরা প্রাচীন কাল থেকে জাফরান ব্যবহার করে থাকে। বিউটি পার্লারে রূপচর্চায় জাফরান অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
 
* জাফরান স্মৃতি ও যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য ঔষুধ হিসাবে কাজ করে।
 
* জাফরানে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্ত চাপ ও হৃদপিণ্ডের সমস্যা জনিত রোগ দূর করে।

*জাফরানের পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্থ কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।

*জাফরানের নানা উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স করতে সহায়তা করে, এতে করে মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷
 
*মেয়েদের ঋতুকালীন অস্বস্তিকর ব্যথা এবং ঋতু শুরুর আগের অস্বস্তি দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।
 
*নিয়মিত জাফরান সেবনে শ্বাস প্রশ্বাসের নানা ধরণের সমস্যা যেমন অ্যাজমা,পারটুসিস, কাশি এবং বসে যাওয়া কফ দূর করতে সহায়তা করে।
 
* জাফরানের ক্রোসিন নামক উপাদানটি অতিরিক্ত জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
 
* জাফরানের রয়েছে অনিদ্রা সমস্যা দূর করার জাদুকরী ক্ষমতা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে ।

* সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসেজ করলে মাড়ি, দাঁত এবং জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
 
*গবেষণায় দেখা যায় জাফরান দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে৷
 
* জাফরানের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ঔষুধ৷
 
* অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে সামান্য একটুখানি জাফরান৷
 
*জাফরানের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে।
 
*জাফরান দেহের কোলেস্টোরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
 
* মস্তিস্কের গঠন উন্নত করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাফরান স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করে৷ এছাড়াও আলজাইমার এবং পার্কিনসন রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাঁচায়।
 
*কিডনি, যকৃৎ এবং মুত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান।
 
*যষ্ঠিমধু এবং দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে৷
 
*পুরুষত্বহীনতা সমস্যা দূর করে সুস্থ যৌন জীবন দেয় জাফরান।
 
*টিউমারের রোধ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
 
 
 
 জাফরানের চাষের জন্য জমি নির্বাচনঃ
 
 
  সব ধরনের জমিতে জাফরান চাষ  করা যায়। বেলে-দোঁআশ মাটিতে জাফরান ফসল চাষে বেশি উপযোগী। এঁটেল মাটিতে জাফরানের ফলন ভালো হয় না, তবে এ ধরনের মাটিতে কিছু পরিমাণ বালু ও বেশি পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে এ মাটিকে চাষ উপযোগী করা যায়।  এরা জলাবদ্ধতা মারা যায়। এ জন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি এ ফসল চাষের জন্য নির্বাচনে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। মাটির পি এইচ ৬-৮ হলে বেশি ভালো হয়। ছায়া বা আধা ছায়ায় এ ফসল ভালো হয় না। এর জন্য প্রয়োজন রোদ আর আলো বাতাস ভিত্তিক জমি।
 
জাফরান চাসের পদ্ধতিঃ
 
 
প্রতিটি জাফরান এর মোথা ১০ থেকে ১২ মিটার দূরত্বে এবং ১২ থেকে ১৪ মেমি গভীরে  রোপন করতে হবে। জুলাই বা অগাস্ট মাসে জাফরান  মোথা রোপন করা হয়। জমি তৈরির সময় গোবর,আবর্জনা আর টিএসপি সার মিশিয়ে ২ সাপ্তাহ রাখতে হবে এবং হালকা সেচ দিতে হবে। বসত বড়িতে ও এর চাষ করা যায়।একবার রোপণ করা হলে ৩-৪ বছর পর্যন্ত ফুল দেওয়া অব্যাহত থাকে। বর্ষার শেষে আগষ্ট মাসে মাটি থেকে গাছ গজিয়ে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দেওয়া অব্যাহত থাকে।
 
জাফরান গাছে ফুলঃ
 
 অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফুল আসে।শীতকালে গাছের বাড় বাড়ন্ত ভালো হয়। শীতের পর গাছ আর বৃদ্ধি হয় না।শীতের পর হালকা সেচ দিতে হয়। আবার খিয়াল রাখতে হবে যেনো পানি জমে না থাকে কারন পানি জমে থাকলে মোথা নষ্ট হয়ে যাবে।
 
জাফরান ফসলের পরিচর্যা ও রোগ বালাইঃ 
 
 
 ফসলের জমিতে আগাছ মুক্ত রাখতে হবে।  নিড়ানী দিয়ে হালকা ভাবে মাটি আলগা করে দেয়া হলে মাটিতে বাতাস চলাচলের সুবিধা হবে এবং গাছ ভালোভাবে বাড়বে। তবে অন্য ফসলের তুলনায় সেচের প্রয়োজনীয়তা অনেক কম। বর্ষায় পানি যেন কোন মতে জমিতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইঁদুর, চিকা ও খরগোস জাফরানের পাতা, ফুল এমনকি গাছের মোথা খেতে পছন্দ করে মোথা যত খায় নষ্ট করে তার দ্বিগুণ। এ জন্য এ ধরনের উপদ্রব দেখা গেলে প্রয়োজনীয় ফাঁদ ব্যবহার করে অথবা মারার জন্য ঔষুধ ব্যবহার করে তা দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
 জাফরান বাজারজাতকরনের প্রক্রিয়াঃ
 
 
ভালো মানের ১০০ গ্রাম জাফরান মসলার দাম ১ লক্ষ টাকা। ফুল থেকে স্টিগমার গুলো  আলাদা করে সেগুলো শুকিয়ে পরিনত করা হয় জাফরান। ফুলের কেশরগুরো এতোটা  ছোট বা  পাতলা যে প্রায় ৫ লাখ কেশর শুকিয়ে পাওয়া যায় ১ কেজি জাফরান। যেহেতু কেশরগুরো ছোট তাই এ কাজে বেশী শ্রমিক নিয়োগ দিতে হয়।মূলত নারী শ্রমিক জাফরান সংগ্রহের জন্য বেশী কাজ করে থাকে। এদর দৈনিক আয় ৪০০ টাকার বেশেী নয়।
 
বাংলাদেশে জাফরান মসলা চাষঃ
 
 
 রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেকৃবি গবেষণায় দেশে সর্বপ্রথম জাফরান উৎপাদন সফলতার মুখ দেখেছে, যা বাংলাদেশে জাফরান উৎপাদনে একটি মাইলফলক। সেই বহুকাল ধরেই নানা মুখরোচক খাবারকে আরও সুস্বাদু করাসহ মূল্যবান প্রসাধনীতে জাফরানের জুড়ি নেই। জাপান প্রবাসী বন্ধুর মাধ্যমে ২০০টি জাফরানের কন্দ আনিয়েছিলেন তিনি। প্রয়োজনীয় পরিচর্যায় কয়েক মাস পর সুবাস ছড়িয়ে সেই ২০০ কন্দের প্রত্যেকটিতেই ফুল আসে।
 
 
সংশ্লিষ্ট এই গবেষক শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলেন, ইরানের জাফরান বিশ্ববিখ্যাত। কাশ্মীরি জাফরানও বিশ্ব বাজারে বেশ চাহিদার। আমাদের দেশে জাফরান উৎপাদন হয় না বলে দেশের সব বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও মিষ্টান্ন সম্ভারেই কেবল প্রতি বছর ছত্রিশ থেকে চল্লিশ কেজি জাফরান আমদানি করা হয়। যার প্রতি কেজির মূল্য তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, ঝুরঝুরে বেলে-দোআঁশ মাটি জাফরান চাষের উপযোগী।
 
 
 
প্রস্তুতকৃত জমিতে কন্দ লাগানোর তিন মাসের মধ্যে জাফরান ফুল সংগ্রহ করা যায়, এ ক্ষেত্রে ফুল ফোটার দিনই ফুল সংগ্রহ করে নিতে হয়। একটি কন্দ থেকে পরবর্তীতে আরেকটি কন্দ হয় এবং প্রতিটি কন্দ বেশ কয়েকবার ব্যবহার উপযোগী। তবে বাংলাদেশে জাফরান নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ করতে হবে। বাংলাদেশ উষ্ণম-লীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে এখানকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা জাফরান চাষের জন্য প্রায় অনুপযোগী। তাছাড়া পানিবদ্ধতা প্রধান বাধা হওয়ায় ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করলে এ ক্ষেত্রে সুবিধা করা যাবে। সার্বিক দিক খেয়াল রাখলে গ্রিন হাউসের মাধ্যমে দেশে জাফরান সম্পূর্ণ সফলভাবে উৎপাদন সম্ভব বলে জানান শেকৃবির এই গবেষক। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে দেশে জাফরান চাষ বেশ ব্যয়বহুল। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে জাফরান চাষের লক্ষ্যে কমপক্ষে ২০০০ বর্গফুটের একটি গ্রিনহাউস প্রয়োজন যাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।(সূত্রঃদৈনিক আল ইহসান থেকে)


 
 

 
 

 

 
 
 
 

 
 
 
 

 
 
 
 
 
 
 
 

 


 

 


No comments:

Post a Comment