Breaking

Wednesday, 3 April 2019

পাল বংশের অন্যতম রাজা দেবপাল

Image result for দেবপাল এর নালন্দা তাম্রশাসন
পাল সাম্রাজ্যের ভাস্কর্য
দেবপালের পরিচয়:::::::::::
দেবপাল ছিলেন পাল রাজবংশের তুতীয় রাজা।তার পিতা রাজা ধর্মপাল এবং তার মাতা রাষ্ট্রকূট রাজকুমারী রণ্ণাদেবী। প্রথম যুগের  ইতিহাসবিদগণ দেবপালকে ধর্মপালের ভ্রতুষ্পুত্র মনে করতেন।ধর্মপালের দুই পুত্র ছিল ত্রিভুন ও দেবট(দেবপাল)। ধারণা করা হয়,যুবরাজ ত্রিভুবন পাল ধর্মপালের মৃত্যরে আগেই পরলোকগমণ করেণ। তাই রাজপুত্র দেবট পিতার মৃত্যুর পর দেবপাল উপাধি ধারণ করে বাংলার সিংহাসন আরোহণ করেন।আবার অনেকে মনে করেন ত্রিভুনের অপর একটি নাম দেবপাল।
 দেবপাল  “পরমেশ্বর পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ” উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন।তার শাসনামলে পাল বংশ গৌরবের স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে। তিনি পিতার অনুসৃতনীতি অনুসরণ করে এক বিশাল সাম্রজ্যের অধিশ্বর হণ। দেবপালের মুঙ্গের তাম্রশাসন, নারায়ণ পালের ভাগলপুর তাম্রশাসন দেবপালের মন্ত্রী  দর্ভপানি ও কেদারী মিশ্রের বংশের বাদল শিলালিপি থেকে আমরা দেবপাল সম্পর্কে জানতে পারি।
#দেবপাল এর রাজত্ব কাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মত পার্থক্যে আছে#
 *রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে (৮১০-৮৫০ খ্রি)
*আব্দুল মুমিন চৌধুরী এর মতে (৮২১-৮৬১ খ্রি)
*বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ সিনহা এর মতে (৮২০-৮৬২ খ্রি)
*দীনেশচন্দ্র সরকারে এর মতে (৮২১-৮৫০ খ্রি)
*দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এর মতে (৮০৬-৮৪৫ খ্রি)
দেবপালের রাজ্য জয়:::::::::::
(১)প্রাগজ্যোতিষের জয়/বন্ধুত্ব:::
পাল সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী একটি রাজ্য ছিল প্রাগজ্যোতিষ বর্তমান এ অঞ্চলটি (আসাম) অবস্থিত।প্রাগজ্যোতিষ রাজা হর্জার বিনা যুদ্ধে দেবপালের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। প্রাগজ্যোতিষ রাজা হর্জার ভীত হয়েছিলেন এবঙ দেবপালের সেনাপতি জয়পালের সঙ্গে যুদ্ধে না গিয়ে পাল সাম্রজ্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব হস্ত প্রসারিত করেছিলেন।
(২) উৎকল (উড়িষ্যা) বিজয়::::::::::::::
উৎকল পাল সাম্রাজ্যের সীমান্ত একটি রাজ্য । উৎকল এ অঞ্চলটি (উড়িষ্যা) অবস্থিত । পাল সাম্রাজ্যের নিকটবর্তী হওয়া দেবপাল কর্তৃক আক্রমণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিল। দেবপালের শক্তিমান সেনাপতি জয়পাল উৎকল রাজ্য আক্রমণ করলে উৎকল রাজা জয়পালের ভয়ে রাজধানী হতে পালায়ণ করেন। জয়পালের আক্রমণ উৎকল ধ্বংস হয়। দেবপাল উৎকল বা উড়িষ্যার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করেছিলেন।
(৩)প্রতীহার রাজাকে পরাস্ত::::::::::::::
দেবপাল প্রতীহারে রাজার দর্পচূর্ন করেন। নগভট্টর পৌত্র প্রথম ভোজ। দেবপাল -এর পিতা ধর্মপাল প্রতীহারের রাজা বৎস্যরাজ ও তার পুত্র নাগভট্টর কাছে পরাজিত হয়েছে। পরবর্তীতে দেবপাল কোন প্রতিহাররাজাকে পরাজিত করে পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ধর্মপাল সময় হতে শুরু হওয়া ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষে দ্বিতীয় পর্যায় দক্ষিনাত্যের রাজা ধ্রব পুত্র তৃতীয় গোবিন্দ হাতে প্রতিহারের রাজা নাগভট্ট পরাজিত হয় ও তার পুত্র রামভদ্র অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরে।এর পর রাষ্ট্রকূট রাজা দক্ষিণাত্যে ফিরে যান।ধর্মপাল কনেওজ আধিপত্য বজায় রাখ। পরবর্তীতে দেবপাল কনৌজ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। দেবপাল দুর্বল প্রতিহাররাজা রামভদ্যের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন বলে মনে হয়।রামভদ্রের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন বলে মনে হয়। রামভন্দ্র মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রথম ভোজ সিংহাসন আরোহণ করে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। প্রথম ভোজ দেবপাল এর নিকট থেকে কনৌজ পুনরূদ্ধার করে নিয়েছিলেন। জানা যায়, দেবপাল বিনা যুদ্ধে কনৌজ ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে -দেবপাল সম্ভবত ৮৪০-৮৬০ অব্দে মধ্যে দেবপাল তাকে পরজিত করেন।
(৪) দ্রাবিড় রাজ্র্য জয়::::::::::
দেবপাল দ্রবিড় রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। ঐতিহাসিকগণ মনে করে দ্রাবিড় রাজ ও রাষ্টকূট রাজাকে অভিন্ন বলে উল্লেখ করেছে। দ্রাবিড় বলতে দক্ষিণ ভারত অর্থাৎ দক্ষিণ কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণাস্থিত ভূভাগের নাম।এই অঞ্চলটি রাষ্ট্রকূট রাজাভুক্ত দাক্ষিনাত্যের ছিল না । সুতরাং দ্রবিড় রাজ ও রাষ্ট্রকূট রাজা অভিন্ন।
(৫) হূণরাজ্র জয়::::::::::
হুণরা ভারতীয় নয়,বহিরাগত। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পথ পেরিয়ে ভারতবর্ষে আসে। ছয় শতকে তারা ভয়াবহ আক্রমনের মাধ্যমে গুপ্তদের করে বিস্তার রাজ্য স্থাপন করেছিল। দেবপাল সময় হূনরাজ্য হিমালয়ের কাছাকাছি স্থানে ছিল। দেবপাল হূণ রাজ্য দখল করেছিলেন। দেবপাল হূণরাজ্য দখল করে কম্বোজ্য পর্যন্ত আগ্রসর হয়েছিলেন।
(৬) কম্বোজ অভিযাণ::::::::::::::::
কম্বোজ দেশ ভারতবর্ষের উত্ত- পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। তিব্বতকে ও কম্বোজ দেশ বলা হয়ে থকে। অশ্বপ্রাপ্তির জন্য দেবপাল কম্বোজ দেশে অভিজান করেছিলেন। কম্বোজ অশ্ব জন্য বিখ্যাত ছিল। তবে হূনরাজ্য ও কম্বোজ রাজ্য উভয়ই পাল সাম্রাজ্যের সীমান্তে অবস্তিত ছিল। নিজ রাজ্যের নিরাপত্তার প্রয়োজনে দেবপাল উক্ত রাজ্যে দুটো বিজয় করেছিলেন।
দেবপালের কৃতিত্ব;;;;;;;;;;;(সূত্র;মাহবুবুর রহমান)
দেবপাল তার পিতার যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন । আরব ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক সোলায়মানের বিবরণ অনুযায়ী দেবপালের এক বিশাল সেনাবাহিনী ছিল। এ বাহিনীতে ৫০০০০ হাতি ছিল। সেনাবাহিনীর সাজ সরঞ্জাম, পোশাক-পরিচ্ছদ ও বিভিন্ন প্রকারের কাজের জন্য ১০০০০ থেকে ১৫০০০ লোক নিযুক্ত ছিল।
(১)দক্ষিণ -পূবৃ এশিয়ার সাথে দেবপালের সম্পর্ক:::::::
দেবপালের নালন্দা তাম্রশাসনে পাঁচটি গ্রাম দানের উল্লেখ আছে । জাভা ও সুমাত্রের শৈলেন্দ্ররাজ  নালন্দায় একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর ব্যয় নির্বাহের জন্য দেবপালের নিকট তিনি সাহায্য প্রার্থনা করেন। দেবপাল সানন্দে পাঁচটি গ্রাম দান করেন। নালন্দা তাম্রশাসনে এই পাঁচটি গ্রাম দানের কথায় উল্লেখ করা হয়েছে।
(২) কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন::::::::::
দেবপাল বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি সুমাত্রা, জাভা বোর্নি ও প্রভৃতি রাজ্যের রাজাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। বহু কবি, সাহিত্যিক ও পন্ডিত ব্যক্তি তার রাজসভা অলংকৃত করেন ।
(৩) বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেবপাল :::::::::::
দেবপাল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তিনি মগধের বৌদ্ধ মঠগুলোর সংস্কার সাধন করেন। তিনি নালন্দায় কয়েকটি মঠ এবং বুদ্ধগয়ায় একটি বড় মন্দির নির্মাণ করেন। দেবপালের পৃষ্ঠপোষকতায় নালন্দায় বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে তার শাসনামলে উত্তর ভারতে লুপ্তপ্রায় বৌদ্ধ পুনরায় উজ্জীবিত হয়।
#দেবপালের পররাষ্টনীতি#
দেবপাল ভারতবর্ষ এবং ভারতের বাইরেও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। যবদ্বীপ, সুমাত্রা ও মালয় উপদ্বীপের অধিপতি শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজ বালপুত্রদের তার নিকট দূত প্রেরণ করেন। শৈলেন্দ্ররাজ নালন্দা বিহারে একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি এর ব্যয় নির্বাহের জন্য দেবপালের নিকট পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলেন।দেবপাল তার সে অনুরোধ রক্ষা করে আন্তরিক সম্পর্ক  বজায় রেখেছিলেন । এ ঘটনা বাংলার সঙ্গে দক্ষিণ- পুর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জের পারস্পরিক সুসম্পর্কের কথা প্রমাণ করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেবপালের খ্যাতি ছড়িয় পড়েছিল। নালন্দা তাম্রশাসনের আলোকে বলা যেতে পারে, গৌড়-মগধের পাল বংশের সাথে সুবর্ণ দ্বীপ তথা দক্ষিণ-পূর্বএশিয়ার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজাদের সাথে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। উভয় বংশ তথা দেবপাল ও বালপুত্রদেব বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার  বৌদ্ধভিক্ষু ও সাধকগণ জ্ঞান আহরোণের জন্য নালন্দায় এসে অবস্থায় করতেন । তারা দেশ ফিরে গিয়ে পাল সাম্রাজ্যের বৌদ্ধধর্মীয় রীতিনীতি জ্ঞাণ ও দর্শনের প্রচার করতেন। দেবপাল দক্ষিণ- র্পব এশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশ-বিদেশে ও বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রেখেছিলেন।
# এর পর পাল সাম্রাজ্যের অবনতি কাল ও পুনরুদ্ধারের যুগ#

No comments:

Post a Comment