Breaking

Saturday, 6 April 2019

পাল সাম্রাজ্যের পতনের ধাবিত কাল

Related image
পাল সাম্রাজ্যের নালন্দা মঠের ধ্বংসাবশেষ
দেবপালের মৃত্যুর পর প্রায় তিনশত বছরাধিক কাল পর্যন্ত পাল বংশের ইতিহাস পতন,অভ্যুদয এবং বন্ধুর পন্থায় উথান-পতন মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছিল।দেবপালের পরবর্তী পাল রাজাগণ শাসনক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেন নি। তার মৃত্যুর পর কয়েকজন দুর্বলচেতা ও অকর্মণ্য ও অকর্মণ্য উত্তরাধিকারী সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার পাল সাম্রাজ্যের গৌরব ও পরাক্রম অব্যাহত রাখেতে পারেন নি। এ সময় অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও পুনঃপুন  বৈদেশিক আক্রমণে পাল সাম্রজ্যের ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিলেন। এ সমস্ত রাজাগণের মধ্যে উদ্যম ও নেতৃত্বের অভাবে পাল সাম্রাজ্যে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছিল। দেবপাল মৃতুর পর পাল সাম্রজ্যের ক্রমেই পতনের দিকে ধাবিত হতে লাগলো। প্রথম মহিপালের আগমণ পর্যন্ত পাল সাম্রাজ্যের অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিল,এমনকি তাদের আদি বাসস্থান উত্তর বাংলায় ভিন্ন রাজশক্তির উদয় হয়েছিল।
দেবপালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রজ্যের অবনতির শুরু হয়। দ্বিতীয় বিগ্রহ পালের (৯৬০-৯৮৮ খ্রি) সময় পাল সাম্রাজ্যের একেবারে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
(১) প্রথম বিগ্রহ পাল (৮৫০-৮৫৪ খ্রি.):::::::
দেব পালের মৃত্যুর পর বিগ্রহ পাল সিংহাসনের আরোহণ করেন। তিনি ছিলেণ জয়পালের পুত্র এবং ধর্মপালের ভ্রাতা বাকপালের পৌত্র। বিগ্রহ পাল দেবপালের পুত্র  রাজ্যপালকে সিংহাসনচুত্য করে ৮৫০ খ্রি. সিংহাসনে বসেন। প্রথম বিগ্রহ বিগ্রহপাল মাত্র ৪বছর রাজ্য শাসন করেন।
প্রথম বিগ্রহপাল পাল সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ সম্রাট ছিলেন।তিনি হৈহেয় রাজবংশের লজ্জাদেবীকে বিবাহ করেন এবং তাদের নারায়ণপাল নামে এক পুত্র পুত্রসন্তানের জন্ম হয়, যিনি পরবর্তী পাল সম্রাট হিসেবে সিংহাসন আরোহণ করেন।
প্রথম বিগ্রহ পালের রাজত্বকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে পার্থক্য আছে::::::::::::
#রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে (৮৫০-৮৫৩ খ্রি.)
# আব্দুল মুমিন চৌধুরী এর মতে (৮৬১-৮৬৬ খ্রি)
# বিন্দেশশ্বরী প্রসাদ সিনহা এর মতে (৮৬০-৮৬৫ খ্রি)
#দীনেশচন্দ্র সরকার এর মতে (৮৫৮-৮৬০ খ্রি)
এর মধ্যে প্রথম তিনজন মনে করেন প্রথম শূরপাল ও প্রথম বিগ্রহপাল একই সময়ে পৃথম স্থানে রাজত্ব করতেন।(সূত্র;উকিপিডিয়া)
(২)নারায়ণপাল (ন্যায়পাল)(৮৫৪-৯০৮)::::::
বিগ্রহ পালের মৃত্যুর পর নারায়ণ পাল  ৮৫৪ খ্রি. পিতৃ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল ও মান্তপ্রিয় শাসক। তার দুর্বলতার সুযোগে নিয়ে বিভিন্ন শুত্রর হামলার ফলে বিশাল পাল সাম্রাজ্য একেবারে সংকুচিত হতে থাকে। তার মাসনামলের উল্লেকযোগ্য ঘটনা ছিল প্রতিহাররাজা প্রথম ভোজের (৮৩৬-৮৮২) কাছে পরাজয়। এছাড়া রাষ্ট্রকূট রাজ দ্বিতীয় কৃষ্ণ (৮৮০-৯৩৪) খ্রি. পাল রাজ্য আক্রমণ। তার সময় আরো উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি ছিল দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলার স্বাধীণ রাজ বংশের উথান,এদের মধ্যে উল্লেকযোগ্য ছিল চন্দ্রবংশ, বর্শ বংশ।
নারায়ণ পাল রাজ্য রক্ষার জন্য দিকে নজর ছিল না। যার ফলে পাল সাম্রজ্যের সামরিক শক্তিদুর্বল হয়ে পড়ে।এর পরে সীমন্তের রাজারা পাল রাজ্য আক্রমণ করতে শুরু করেন।ঐতিহাসিকরা মনে করেন- অঙ্গ, বঙ্গ,ওমগধের অধিপতিরা নারায়নপালের বশ্যতা স্বীকার করেছিল। আনুমানিক ৮৬০ খ্রি, অমোগবর্ষ কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী বেঙ্গী দেশ জয় করেন। সম্ভবত এর কিছু কাল পরেই তিনি পাল রাজ্য আক্রমণ করেন। এই সময় অঙ্গ বঙ্গ ও মগধ তখন পৃথক স্বাধীন রাজ্যে পরিনত হয়েছিল। সম্ভবত রাষ্টকূটরাজার আক্রমণে পালরাজা পরাজিত হয়েছিল।কিন্তু রাষ্ট্রকূটরাজা যে স্থায়ীভাবে পালরাজ্যের কোন অংশ অধিকার করেছিলেন বলে মনে হয না। তবে এই পরাজয়ের ফলে পালরাজাগণদের খ্যাতি ও প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়। এর পর থেকে  অন্যাণ্য রাজার পাল সাম্রাজ্য আক্রমণ সাহসী হয়ে উঠেছিল। রাষ্ট্রকূটরাজার পর এই উড়িষ্যার শুল্কিবংশীয় মহারাজা রণস্তম্ভ বাংলার আক্রমণ করেণ এবং রাঢ়ে কিছু  অংশ দখল করে নেন।
নারায়ন পাল রাষ্টকূটদের আক্রমণ সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পরেণ।আর এদিক দিয়ে প্রতীহাররাজ ভোজ পুনরায আর্যবর্ত দখল করেন।আর তিনি দ্রুত পাল সাম্রাজ্য আক্রমণ করে বসেন। নারায়ণ পাল এই আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হন। এর সাথে যুক্ত হন কলচুরি ও গুহিলোট রাজারা। এদের সমাবেশে নারায়ণপাল শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের ফলে ভোজ বংশের লোক পাল সাম্রজ্যে পুনরায় আবার আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ভোজের পুত্র মহেন্দ্রপাল পাল সাম্রজ্যে আক্রমণ করে বিহার প্রদেশ আধিকার করেন।
এভাবে নবম শতাব্দীর শেষভাগে শুধু আর্যবর্তের বিস্তার সাম্রাজ্যে নয়, পালরাজগনের নিজ রাজ্যেও শুত্র করতলগত হলো।নারায়নপালের অক্ষমতা ছাড়াও হয়তো এরূপ শোচনীয় পরিনামের অন্য কারণও ছিল আত্মকলহ। এভাবে অব্যন্তরণীন কলহ ও চতুর্দিকে বহিঃশুত্র আক্রমনে পাল সাম্রাজ্যে পতনের দিকে ধাবিত হয়।
নারায়ণপালের পুত্র রাজ্যপাল রাষ্টকূট রাজা তুঙ্গের কণ্যা ভাগ্যাদেবীকে বিবাহ করেন। এই বিবাহের ফলে পালরাজগণের কিছু সুবিধা হয়েছিল । অব্যশ পরবর্তীতে নারায়ণ পাল বিহার ও বাংলার কিছু অংশ  দখল করতে পরেছিলেন। ৯০৮ খ্রি. নারায়ণপাল মৃত্যুবরণ করেণ। এর পর পাল সিংহাসনে বসেন তার পুত্র রাজ্যপাল।
(৩) রাজ্যপাল (৯০৮-৯৪০ খ্রি.):::::::::::::
রাজ্যপাল দীর্ঘকাল রাজত্ব করেছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।আব্দুল মমিন চৌধুরী এর মতে রাজ্যপালের রাজত্বকাল ৯২০ থেকে ৯৫২ খ্রি.।সুতরাংরাজ্যপালের রাজত্বকাল কমপক্ষে সাড়ে তিন দশক বছর।
রাজ্যপালের মন্ত্রী যশোদাস উল্লেখ করেছেন যে, ম্লেচ্ছ, অঙ্গ, বঙ্গ,কলিঙ্গ, ওড্র,পান্ড্য কর্ণাট,লাট সুম্ম, গুর্জর প্রভৃতি দেশসমুহ  রাজ্যপালের নির্দেশে অমান্য করার সাহস রাখতেন না ।সুতরাং অনেক ঐতিহাসিক মনের করেনে রাজ্যপালের পক্ষে এত দূরের রাজ্য জয় করা সম্ভাব নয়।এক সময় রাজ্যপালের সাম্রাজ্যের সামরিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।কারণ কয়েকটি বৈদেশিক শক্তি গৌড় রাজ্য আক্রমণ করেন,কলচুরিরাজ প্রথম যুবরাজ গৌড়,কর্নাট ও কলিঙ্গ দেশ অভিযান করেছিলেন। যুবরাজ পুত্র লক্ষ্মণরাজও পরবর্তীতে উড়িষ্যায় জয় করে গৌড় ও বঙ্গে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
রাজ্যপাল একজন প্রজানুঞ্জক শাসক ছিলেন। আসলে তার  আমলে শুত্রদের আক্রমণ কম হওয়ায় তিনি প্রজাদের কল্যানে কাজ করতে পেরেছেন।তিনি অনেক রাস্তা ঘাট নির্মাণ করেছেন।আর ব্রাক্ষ্মনদের জন্য অনেক মন্দির নির্মাণ করেছেন।
রাজ্যপাল ৯৪০ খ্রি. মৃত্যু হয়। এরপর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র গোপাল। ইতিহাস একে দ্বিতীয় গোপাল বলা হয়।
(৪)দ্বিতীয় গোপাল(৯৪০-৯৬০ খ্রি):::::::::
দ্বিতীয় গোপাল যখন সিংহাসনে বসেন তখন পাল রাজ্য শুধু গৌড়,মগধ,ও বরেন্দ্র সীমাবদ্ধ ছিল।কিন্তু তার এই অল্প সংখ্যক রাজ্যর উপর বৈদেশিক আক্রমণ ঘটে।
রাষ্ট্রকূটদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রতিহার বংশের পতন হয়।কিন্তু প্রতিহার বংশ পুনরায় চান্দেল রাজবংশ ও কলচুরিগণদের সাহায্য পেয়ে প্রতিহার রাজ্য বংশ শক্তিশালী হয়ে উঠে।দ্বিতীয় গোপালের সমসময় যশোবর্মন মধ্যভারতের গুরুত্ব স্থাণ কলিঞ্জর দুর্গ দখল করেন এবং নিজেকে আর্যাবর্তের একচ্ছ অধিপতি বলে ঘোষণা করেন।তিনি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাশ্মীর থেকে বাংলা পর্যন্ত আভিযান প্রেরণ করেন।তিনি অসংখ্যক গৌড় বাসিকে হত্যা করেন। তিনি এবং তার পুত্র ধঙ্গা দ্বিতীয় বারের মত বাংলা আক্রমণ করেণ।কিন্তু ২য় গোপালে পক্ষে তা প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না।ফলে রানীকে বন্ধ করা হয়।
চন্দ্র রাজাগনদের আক্রমণে গোপাল সাম্রাজ্যে ধ্বংষ হয়ে যায। ক্ষুদ্র পাল রাজ্য বাংলাও বিভিন্ন জনপদে বিভিক্ত হয়ে পরেছিল।
একসময় ২য় গোপাল কম্বোজদের দ্ধারায় আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।কিন্তু  চন্দ্র রাজারা কম্বোজদের বিতারিত করেছিলেন এবং গোপালকে পুনরায় সিংহাসনে বসার জন্য সাহায্য করেন। কারণ চন্দ্র বংশ ও পাল বংশ বৌদ্ধ দর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
(৫)দ্বিতীয় বিগ্রহপাল (৯৬০-৯৮৮খ্রি)::::::::::::::::::::
দ্বিতীয় গোপাল মৃত্যুর পর  তার দ্বিতীয় বিগ্রহপাল সিংহাসন আরোহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন ভীত রাজা। ঐতিহাসিকরা তাকে শুধু কলাবিদ্যায় পারদর্শিতার ছাড়া আর কোন দক্ষতার কথা উল্লেখ করে নেই।তিনি অকর্মা ও অলস রাজা ছিলেন। এই সময় পাল বংশের নামটুকু ছাড়া কোন গৌরব আর ছিল না। তখল পাল রাজ্য গৌড় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।সুতরাং তিনি শুধু নাম মাত্র রাজা ছিলেন।
দ্বিতীয় পাল সিংহাসনের বসার পর  কম্বোজদের আক্রমণের শিকার হয়।তখন দ্বিতীয় বিগ্রহপাল চন্দ্র বংশের কাছ থেকে কোণ রকম সাহায্য পাই নিই। ফলে উত্তর বঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গ কম্বোজদের হাতে চলে যায়।একসময় ২য় বিগ্পারহ পাল সিংহাসন হারন। কিন্তু পরবর্তীতে বিগ্রহ পালে পুত্র ১ম মহীপাল প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করে  পাল রাজ্যর গৌরব ফিরি্য়ে আনেন।
#দ্বিতীয় বিগ্রহ পালের পর তার পুত্র ১ম মহীপাল সিংহাসনে বসে পাল সাম্রজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন#

No comments:

Post a Comment