Breaking

Sunday, 5 May 2019

বীরসেন/সামন্তসেন/হেমন্তসেন/বিজয়সেন এর শাসন আমল:::::::::::::

সম্পর্কিত ছবি
সেন রাজাদের নামাঙ্কিত চিত্র:
#বীর সেন:::::::::::::
সেন বংশের আদি পুরুষ ছিলেন--বীরসেন।অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন তাকে রাজপুত্র বলে উল্লেখ করেছেন। বীর সেন কর্ণাটদেশে যুদ্ধবিগ্রহে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।সেন লিপিমালায় তার পিতা বা পুত্রের কোন নাম পরিচয় উল্লিখিত নেই।তবে জানা যায় যে ,তিনি ক্ষত্রীয় পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
#সামন্তসেন::::::::::::::::::
বীর সেনের পর সান্তসেন সেনবংশের সিংহাসন আরোহণ করেণ।সামন্তসেন থেকেই বাংলায় সেন বংশের উৎপত্তি হয়। দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে জানা যায় সামন্ত সেন কর্ণাটের লক্ষ্মী লুন্ঠনকারী দুর্বৃত্ত শুত্রদের ধ্বংস করেছিলেন।সামন্তসেন দক্ষিণে রামেশ্বর সেতুবন্ধ পর্যন্ত অভিযান করেছিলেন। কর্ণাট দেশে বহু যুদ্ধ বিগ্রহ পর সামন্ত  সেন শেষ বয়সে গঙ্গা নদীর তীরে জীবন যাপন করেছিলেন। বল্লালসেনের নৈহাটি তাম্রশাসন উল্লেখ করা হয়েছে- সামন্ত সেন জন্মগ্রহণ করেছেন- রাঢ়দেশে ।কোন কোন ঐতিহাসিকরা বলেন- কর্ণাটদেশে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তবে যেখানেই হোক তার সাথে উভয় স্থানে যোগাযোগ ছিল।আবদুল মমিন চৌধুরি বলেন, সামন্তসেন সম্ভবত উত্তর রাঢ় বসতি স্থাপন করেন।(তিনি বর্ধমান অঞ্চলে বাস করতেন)
#হেমন্তসেন:::::::::::::::
সামন্তসেনের পুত্র-হেমন্তসেন।হেমন্তসেনেকে প্রথম সেন বংশের রাজার মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তিনি মহারাজধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।পাল সাম্রাজ্য দ্বিতীয় মহিপাল আমলে সামন্ত বিদ্রোহ দেখা দিলে সেই সুযোগে হেমন্তসেন রাঢ়দেশের একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তার রাজ্যের নাম ছিল কাশি পুরী। হেমন্তসেনের রানী যশোদেবী মহারাজ্ঞী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
হেমন্তসেন শক্তিশালী রাজা ছিলেন কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। কারণ হেমন্তসেনের কোন লিপিমারা পাওয়া যায় নিই।আবার অনেক পন্ডিত মনে করেন তিনি  রাঢ় দেশে পাল রাজাদের সামন্ত রাজ ছিলেন এবং কৃতিত্বের সাথে পাল রাজাদের রক্ষা করেন।
#বিজয়সেন::::(১০৯৫-১১৬০ খ্রি):::::::::::::::
সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা  হিসেবে বিজয়সেনকে বলা যেতে পারে।তিনি সমগ্র বাংলার এক গুচ্ছ অধিপতি ছিলেন।বিজয় সেন ছিলেন হেমন্ত সেনের পুত্র। তার প্রথম নাম ছিল ধীসেন ।পরে শুত্র সৈন্য পরাজিত করে বিজয় সেন  নামে খ্যাতি লাভ করেন।আনুমানিক১০৯৫ খ্রি.হেমন্তসেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বিজয়সেন সিংহাসন আরোহণ করেন।তিনি দীর্ঘ ৬২ বছর কৃতিত্বের সাথে রাজত্ব করে।
কেউ কেউ বলেন ৩২ বছর  রাজত্ব করেন।বিজয় সেনের পূর্বপুরুষগণ কর্ণাটে বসবাস করতে এবং তারা বাংলায় রাঢ় অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজ্য  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।পরবর্তীতে বিজয়সেন সুযোগমতো
স্বাধীনতা ঘোষণা করে সমগ্র বাংলার উপর আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি নান্য,বীর,বর্ধন ও রাঘবকে পরাজিত করেন। এ ছাড়াও বিজয়সেন সীমান্তবর্তী রাজ্য কামরুপ,কলিঙ্গ ও গৌড়দেশের রাজাদের সঙ্গেও সংঘর্ষে সফলতা লাভ করেন।পশ্চিম ভারতের বিরুদ্ধে তিনি অভিযানে নৌ অভিযান  প্রেরণ করেন এবং সফল হন।
#বিজয়সেনের -দেওপাড়া প্রশস্তি::::::::::::
বিজয়সেনের সভাকবি উমাপতি ধর এ প্রশস্তির রচয়িতা। এটি রাজশাহীর দেওপাড়া থেকে আবস্কিৃত হয়েছে বিধায় একে দেওপাড়া প্রশস্তি বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এ প্রশস্তিটি একটি পাথরে ফলকে উৎকীর্ণ। বর্তমান কলকাতা জাদুকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
#বিজয়সেনের ব্যারাকপুর তাম্রশাসন:::::::::::::::::::
এই তাম্রশাসন চব্বিশপরগনা জেলার ব্যারাকপুর সেনানিবাস নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।এই কারনে তাম্রশাসনটি ব্যারাকপুর তাম্রশাসন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এটি ৬২ টি রাজ্যাংকে অঙ্কিত উল্লেখ করা আছে।বিজয়সেনেরপাইকোর মূর্তিলিপি বীরভূমি জেলার পাইকোর গ্রামে পাওয়া গেছে।
#বিজয়সেনের প্রাথমিক জীবন::::::::::::::::::::::::::::::::
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, পাল সাম্রাজ্যে রাম পালের আমলে বিজয় সেন সামন্ত রাজা ছিলেন।বিজয় সেন একজন সামন্ত রাজা হিসেবে তার কাজ আরম্ভ করেন।পাল রাজা রামপাল যখন কৈবর্ত শাসক ভীমকে পরাজিত করার জন্য সামন্ত রাজাদের সাহায্য নিয়েছিলেন তখন তাদের মধ্যে বিজয় সেনও ছিলেন।দেওপাড়া প্রশস্তি ১৯ নং শ্লোক থেকে মনে হয়--বিজয়সেন কৈবর্তদের হাত থেকে বরেন্দ্র উদ্ধার রামপালকে সাহায্য করেছিলেন এবং এর বিনিময় বিজয়সেন রাঢ়ে  স্বাধীন ক্ষমতা লাভ করেছিলেন।
#রাঢ় অঞ্চলের স্বাধীনতা লাভ:::::::::::::::::::::::::
পাল শাসক রামপালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্যে খুব বেশিদিন  টেকে নিই।রামপাল পাল সাম্রজ্যে যে শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন তার পরবর্তী কোন শাসক আর তার মতো সাহসী ও শক্তিত্তার পরিচয় দিতে পারেন নি।ফলে পাল সাম্রাজ্য খন্ড খন্ড হয়ে ভেঙ্গে যায়। পাল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যাবার সাথে সাথে সামন্ত রাজারাও পাল শাসকদের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এমত অবস্থা বিজয়সেন রাঢ় অঞ্চলে স্বাধীনতা অর্জন করে শক্তিশালী হয়ে  উঠে।
#বিজয়সেনের বিবাহ:::::::::::::::::::::::::::
বিজয়সেনের লিপিমালা থেকে জানা যায়- বিজয়সেন শূরবংশীয় রাজকন্যা বিলাস দেবীকে বিয়ে করেন। বিলাস দেবী অত্যন্ত গুণসম্পন্ন মহিলা ছিলেন। তার যোগ্যতা ও গুণপনায় তিনি রাঢ়ের প্রধাণ মহিষীয় পদ  অলঙ্কৃত করেছিলেন। বিলাস দেবী প্রভাবশালী ছিলেন বলে জানা যায়।সুতরাং বিজয়সেনের উথানকালে শূরবংশ অনেক শক্তিশালী ছিলেন। ফলে এ বংশের কন্যা বিলাসদেবীকে বিয়ে করার কারণে বিজয়সেন সে বঙশের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির সুবিধা লাভ করেছিলেন।
#এই প্রসঙ্গে আব্দুল মমিন চৌধুরি বলেন,কালক্রমে বিজয়সেন রাঢ় অহ্চলে স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।রাজকন্যার কারণে বিজয়সেন বলা যায় ধীরে ধীরে রাজত্ব জয় করে নিয়েছিলেন।
#বিজয়সেনের রাজ্য জয়::::::::::::: 
(১)কামরুপ রাজ্য  জয়::::::::::::::
বিজয় সেন  কর্তৃক কামরূপ রাজ্য জয় উল্লেখ থাকলেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত কোন ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না।তবে কুমারপালের মন্ত্রী যিনি পরবর্তী কামরূপের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিনে,বৈদ্য দেবের এ কমরূপ রাজ্যের সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা আজও সম্ভব হয় নি।
(২)কলিঙ্গ রাজ্য জয়::::::::::::::::::::
কলিঙ্গ রাজ্যে উড়িষ্যায় অবস্থিত। বিজয়সেনের দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে জানা যায়- বিজয় সেন কলিঙ্গ রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। এ কলিঙ্গ রাজার নাম ছিল-রাঘাব।
(৩) কৌশাম্বী রাজ্য জয়:::::::::::::::::::
বিজয়সেন কৌশম্বীরাজ দ্বোরোপবর্ধনের সাঙ্গে যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে তাকে পরাজিত করেছিলেন।দ্বোরোপরর্ধন সম্ভবত রাজশাহী অঞ্চলে রাজত্ব করতেন । তিনি রাজ রামপালের একজন সামন্ত শাসক ছিলেন।
(৪)কোটাটবী রাজ্য জয়:::::::::::::: 
বিজয়সেন বীরগুণের কোটাটবী রাজ্য জয় করেছিলেন। কোটাটবী বলতেন সম্ভবত বাকুড়া জেলার কোটেশ্বর অহ্চলকে বুঝানো হয়েছে। বীরগুণ রামপালের সামন্ত রাজা ছিলেন। 
(৫)বিজয় সেন নান্যদেবের মিথিলা রাজ্য জয়::::::::::::::::::::::::::
নন্যদেব ছিলেন মিথিলার রাজা। তিনি একজন শক্তিশালী রাজা ছিলেন। সেনদের মতো তিনিও কর্নাট দেশীয় নাগরিক ছিলেন।ভাগ্যান্বেষণে নান্যদেব বিহার বা মিথিলায় স্বীয় রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেণ ।কোন এক সময় মিথিলার রাজা নান্যদেবও বিজয় সেনের শক্তি পরীক্ষা হয়। নান্যদেব একাদশ শতকের শেষের দিকে উত্তর বিহারের ক্ষমতাহরোন করে বাংলার দিকে সাম্রাজ্যে বিস্তারে মনোযোগী হয়েছিলেন। সেহেতু,স্বাভাবিকভাবেই বিজয় সেনের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধে, সে যুদ্ধ নান্যদের পরাজয়বরণ করেন।
#বিজয় সেনের কৃতিত্ব:::::::::::::::::::
(১)কূটকৌশলী শাসক::::::::::::::::::: 
কৈবর্তদের বিরুদ্ধে রামপালের সাফল্যের কারণে বিজয় সেনকে কিছুদিন যুদ্ধাভিযান বন্ধ রাখতে হয়। শুর পরিবারে বিয়ে করে তিনি শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং রামপালের দুর্বল উত্তরাধিকারীদের দুবৃলতার সুযোগে স্বীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। তিনি বুদ্ধিমান,সাহসী ও রণকুশলী ছিলেন।
(২) ঐক্য স্থাপন::::::::::::: 
সামান্য একজন সামন্ত হতে সমগ্র বাংলায় সার্ববৌভ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। বিজয় সেন সামন্ত রাজাকে পরাজিত করার জন্য সারা বাংলাদেশে এক কেন্দ্রীয় শক্তির অধীনে আনয়ণ  করেন। তিনি পরমেশ্বর পরমভট্টারক ও মহারাজধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।
(৩) শান্তি -শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা::::::::::::::::::: 
তিনি  “অরিরাজ বৃষভশঙ্কর” এই গৌরবসূচক নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি দেশে শন্তি-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। দেশের জনসাধারণ তার সময়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করাত।
(৪) ধর্মপরায়ণতা:::::::::::::
বিজয়সেন নিজে শৈব মতাবলম্বী ছিলেন। বৈদিক ধর্ম ও ব্রাক্ষণদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাবান ছিলেন। তার অনুগ্রহে ব্রাহ্মণগন সমাজে ধনবান ও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। ধর্মের প্রতি ছিলেন তিনি অত্যন্ত যত্নবান।
(৫) চারিত্রিক গুনাবলি:::::::::::::::::::: 
বিজয় সেন ছিলেন যোগ্য শাসক,দানবীর  নির্মল চরিত্রে অধিকারী। দেওপাড়া প্রশান্তি কবি উমাপতিধর বিজয়  সেনের চারিত্রি গুণালির  ভুয়সী প্রশংসা করে বলেছেন , যতদিন সুরধনী গঙ্গ, স্বর্গ মর্ত্য ও পাতাল পবিত্র করবে, যতদিন ত্রিবেদ (সাম,যজু, ঋক) ধার্মিকদের হৃদয়ে আনন্দে সঞ্চার করবে,ততদিন বিজয় সেনের  কীর্তি তাদের ন্যায় কাজ করবে।কবি শ্রীহর্ষ রচিত  একটি প্রশস্তিতেও বিজয় সেনের গণর্কীতন দেখতে পাওয়া যায়।তার ব্যক্তিত্ব তাকে ইতিহাসে অবিস্মরনীয় করে রেখেছে।
#বিজয় সেন আমলে(উৎসব):::::::::::::
*স্বর্ণালি তুলাপুরুষ মহাদান উৎসব নামে বিজয় সেনের আমলে একটি উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করা হতো। চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করতেন স্বয়ং বিজয় সেনের প্রধান মহিষী মহারানী বিলাসদেবী। এই উৎসবের প্রধানে পুরোহিত ছিলেন - ইদয়করদেব শর্মা। তাকে উপহারস্বরূপ স্থায়ীভাবে ভুমি দান করা হয়েছিলে। এ উৎসব উপলক্ষে বিজয়সেন ব্রাক্ষণদের এতটাই দান করা হয়েছিল। এ উৎসব উপলক্ষে বিজয়সেন ব্রাহ্মনদের এতটাই দান করতেন যে ব্রাহ্মণগন বিত্তশালী হয়ে যেতো।
মৃত্যু:::::::::::::::
 #বিজয় সেন ১১৫৮ খ্রি. সালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

 
 


 


 



No comments:

Post a Comment