Breaking

Tuesday, 12 March 2019

সম্রাট ঔরঙ্গজেব

Image result for মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব
সম্রাট ঔরঙ্গজেব(১৬৫৮-১৭০৭)
পরিচয়::::::::::::::::::
১৬১৮ খ্রি .২৪ অক্টোবর দাহোদে  ঔরঙ্গজেব জন্মগ্রহন করেন । তিনি ইতিহাস আবুল মুজাফফর মহিউদ্দীন মুহাম্মদ ঔরঙ্গজেব আলমগীর পাদশাহ গাজী নামে পরিচিত।তিনি শাহজানের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন । তার মেধা ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ । তিনি আরবি- ফার্সি উভয় ভাষায় লিখতে ও কথা বলতে পারতেন ।হিন্দি ভাষায়ও তার দখল ছিল । তবে তিনি ধর্মশাস্ত্র পাঠে তিনি উৎসাহী ছিলেনে। ঔরঙ্গজেবের প্রথম স্ত্রী বাই বেগম আর দ্বিতীয় স্ত্রী দিলরাস বানু বেগম ।সম্রাট ঔরঙ্গজেব ১৫৮ মিলিয়ন প্রজাকে শাসন করতেন ।তার সময় সম্রাজ্যের বাৎসরিক আয় ছিল ৩৫০ মিলিয়ন ডলার । তার পাচ পুত্র ও দুই কন্যার কথা ইতিহাসে জানা যাই।তারা হল:::::::::::::::::::::
#জ্যেষ্ঠ পুত্র মুহাম্মদ সুলতান
#দ্বিতীয় ”””বাহাদুর শাহ
#তৃতীয়””””আজম শাহ
#চতুর্থ ”””””সুলতান মুহাম্মদ আকবর
#পঞ্চম””””””মুহাম্মদ কাম বক্স
#জ্যেষ্ঠ কন্যা””””জেব-উন-নেসা
#বদর-উন-নেসা””””’তৃতীয় কন্যা
কৈশোর সাহসিকতা::::::::::::::::::::::::
বাল্যকাল থেকে ঔরঙ্গজেব সাহসী ছিলেন।কাথিত আছে; একদিন হস্তীযুদ্ধে দর্শন কালে একটি হস্তী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আক্রমণ করে ।সম্রাট শাহজাহান ও অন্য রাজকুমারও উপস্থিত ছিলেন ।তখন তার বয়স ছিল ১৪বছর ।উন্মত্ত হাতির আক্রমনে বিচলিত না হয়ে তিনি নিজ অস্ত্রের দ্বাধা হাতিকে ভীষণ ভাবে আঘাত করেন।শুরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাতি পালয়ন করে। সকল কিশোর যুবরাজের দুঃসাহস দেখে বিস্ময়াবিভূত হন ।সম্রাট শাহজাহান আনন্দের সাথে পুত্র বুকে জড়িয়ে আদর করেন ।
ঔরঙ্গজেবের প্রথমিক কার্যাবলি::::::::::::::::::::
উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বের ফলে মুঘল শাসন ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ।কেন্দ্রয়ী সরকার দুর্বলতার ফলে সামন্ত রাজারা নিজ  ইচ্ছা মত শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে ।ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে । যার ফলে জনগনের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার ফলে তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে ।সম্রাজ্যের কোন অংশে অনাবৃষ্টি,অতিবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখ দেয় ।ঔরঙ্গজেব সিংহাসনে
অধিষ্ঠিত হয়েই জনসাধারণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য কয়েকটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
#সম্রাট জনগণের আনুগত্য ও সহানুভূতি অর্জনের লক্ষ্যে তাদের মোট দেয় করের পরিমাণ হ্রাস করেন।
#কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য তিনি বিশেষ দৃষ্টি দেন ।
#সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের জন্য তিনি বপ্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বদলীর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন ।
সম্রাট কতিপয় সংস্কার::::::::::::::::::::::::::
সম্রাট ঔরঙ্গওজেব অত্যন্ত ধর্মভীরু ছিলেন এবং ইসলামের অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে সেনে চলতেন।
(১)উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে ঔরঙ্গজেবর সাফল্য অন্যতম কারন ছিল সুন্নী মুসলিম সম্প্রদায়ের আন্তরিক সমর্থ ও সহযোগিতা ।
(২)তিনি আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহী রহিত করেন ।
(৩)মুসলিম জ্যোতির্বিদের দ্বারা তিনি নতুন পঞ্জিকা তৈরী করেন ।
(৪)তিনি সম্রাজ্যে মদপান ও জুয়াখেলা নিসিদ্ধ করেন ।
(৫)তার রাজত্ব কালে সঙ্গীত নিষিদ্ধ করেন ।
(৬)সম্রাট কপালে চন্দনের রাজটিকা দেওয়ার প্রথাও তিনি নিষিদ্ধ করা হয় ।
(৭) স্ত্রী লোকদের সুফি সাধকের মাজার জেয়ারত নিষিদ্ধ করা হয় ।
(৮) জনসাধরণের সুফি সাধকের মাজার জেয়ারত নিষিদ্ধ করা হয় ।
(৯) তিনি মহররমের মিছিল বন্ধ করেন । হিন্দুদের সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেন ।
(১০) তিনি নতুন অনেক মসজিদ নির্মাণ করেন। পুরাতন মসজিদ সংস্কার করেন ।
##ঔরঙ্গওজেব এর ৫০বছরের শাসন আমল  দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় । রাজত্বকাল প্রথম ভাগ উত্তর ভারতে অবস্থান (১৬৫৮-১৬৮১ খ্রি)আর দ্বিতীয় ভাগদাক্ষিণাত্যে অবস্থান(১৬৮১-১৭০৭)। প্রথম ভাগে 
ঔরঙ্গজেব উত্তর ভারতের কার্যাবলির মধ্রে সমীবদ্ধ ছিল ।এই সময় উলেখযোগ্য ঘটনা ছিল উত্তর-পূর্ব সীমান্তের যুদ্ধ,উত্তর- পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধ ।
ঔরঙ্গজেবের উত্তর -পূর্ব সীমান্তে রাজ্য প্রসার::::::::::::::::::::::::::::::::::
সম্রাট ঔরঙ্গজেবও রাজ্য বিস্তার নীতি গ্যহন করেন ।ঔরঙ্গজেব এর শাসন আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে । ঔরঙ্গজেব সর্ব প্রথম ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে  দুটি হিন্দু রাজ্য আসামও কুচবিহার রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরন করেন ।১৬৬১ খ্রি সম্রাট মীর জুমলাকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন এবং তাকে কুচবিহার ও আসামের নৃপতিদেরকে দমন করার জন্য প্রেরণ করেন করেন ।আসাম ও কুচবিহারের হিন্দুরাজারা প্রায়ই মুঘল সীমান্তে হামলা চালিয়ে রুটপাট করত।
সম্রাটের নির্দেশে মীরজুমলা কুচবিহার আক্রমণ করেন এবং সহজে কুচবিহার দখল করেন ।কুচবিহারের রাজা যুদ্ধ না করে না করেই পালয়ন করেন ।এরপের মীর জুমলা আসামের দিকে অগ্রসর হয়।এই সময় আসামের শাসক ছিলেন আহোমরাজ ।মীর জুমলা  ১২০০০   অশ্বরোহী,গোলন্দাজ বাহিনী  ও নৌবহর নিয়ে  আক্রমণ  চালালে আহোমরাজ প্রতিরোধ অসমর্থ হয়ে রাজধানী পরিত্যাগ করে সপরিবারে পার্বত্য অঞ্চলে আশ্যয় গ্রহণ করেন। মঙগল বাহিনী আসামের রাজধানী গড়গাও দখল করে এবং ধনরত্ন ও হাতি লুট করে ।এরপর বর্ষাকাল এসে পড়ায় মুঘল সৈন্যরা আসামের জলবায়ু ও নানাপ্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে বিব্রত হয়ে পড়ে।এই সুযোগে আহোমরা
মুঘল বাহিনীর উপর আক্রমণ চালয় এবং সব কিছু পুনরুদ্ধার করে । বর্ষা শেষে মুঘলরা আবার শক্তিশালী হয়ে উঠলে  আহোমরাজ মীরজুমলার সাথে এক সদ্ধি স্তাপন করেন ।পরবর্তীতে মীরজুমলা আসাম অবস্থান কালে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ঢাকা ফেরার পথে ১৬৬৩ খ্রি. মৃত্যু হয়।মীরজুমলার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আহোমরা তাদের হস্থচ্যুত স্থানগুলো আবার দখল করে নেই ।
মীর জুমলা মৃত্যুর পর ঔরঙ্গজেব শায়েস্তা খানকে  দাক্ষ্র্র্রিনাত্যে থেকে প্রত্যাহার করে বাংলার শাসনর্কা নিযুক্ত করেন ।শায়েস্ত খান ৩০ বছর এই পদে অদিষ্ঠিত ছিলেন ।তিনি বাংল এসে লক্ষ্যে করেন যে,
আরাকানরা পর্তুগীজদের সহায়তায় পূর্বও দক্ষিন বঙ্গের জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে।শায়েস্তা খান আরাকানদের রাজাকে পরাস্থ করার জন্য নৌশক্তি বৃদ্ধি করেন।তিনি ১৬৬৬ খ্রি আরাকান রাজাকে পরাস্থ করে চট্টগ্রাম দখল করেন।ফলে রাংলার জনগন আরাকানদের হাত থেকে মুক্তি পায়।
শায়েস্তা খান কুচবিহারের রাজাকেও মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয় ।তার শাসন আমলে বাংলার খাদ্য দ্রব্যের দাম দারুন সস্তা ছিল। যেমন টাকাই ১০ মন চাল পাওয়া যেত।
ঔরঙ্গজেবের উত্তর -পশ্চিম সীমান্ত নীতি:::::::::::::::::::::::::::::::::: 
উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ঔরঙ্গজেব অগ্রসরবাদ নীতি অনুসরণ করেন । এই নীতির পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারন আছে ।সীমান্তে মুসলিম গোত্র গুলো মুগল সাম্রাজ্যের জন্য বিপদের স্বরুপ।তাদের পাঞ্চাবের সম্পদের প্রতি আর্কষন ছিল  এবং ভারত সীমানায় আক্রমণ চালাত।
ঔরঙ্গজেব সীমান্তের জতিগুলোকে বশে আনার জন্য প্রথমে অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন কিন্তু এর ফল তেমন লাভ হয় না ।
###ইউসুফজাই উপজাতীয় বিদ্রোহ(১৬৬৭)::::::::::::::::::::::::::::::
১৬৬৭ খ্রি. ইউসুফজাই নামক এক উপজাতি ভাগু নামক এক নেতার নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । ভাগু অন্য উপজাতিগুলোকে সংবদ্ধ করে রাজনৈতিক চেতনায় জাগিয়ে তোলেন । উপজাতি দলগুলো সিন্ধুনদ অতিক্রম করে মুঘল সাম্রাজ্য আক্রমণ করে লুটতরাজ ও অত্যাচার শুরুকরে।
ঔরঙ্গজেব এই সংবাদ জানতে পেরে  উপজাতিদের বিরুদ্ধে মুঘল সেনাপতি কামিল খান ও আমীন খানকে প্রেরন করেন । অবশেষে তারা উপজাতিদের দমন করতে সমর্থ হন ।
##আফ্রিদিদের বিদ্রোহ:::::::::::::::::::::::: 
১৬৭২ খ্রি. আফ্রিদিরা আকমল খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে । আকমল খান তার অনুসারীদের মুঘলদের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে নির্দেশ দেন।আলী মসজিদ নামক স্থানে আফ্রিদির মুঘলদের পরাজিত করেন।এতে মুঘলদের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয় ।আর আকমল খনের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।
পরবর্তীতে খটকেরাও আফ্রিদিদের সঙ্গে যোগ দেয় । খটকদের নেতা ছিলেন খুশহাল খান ।তিনি এক ধারে সৈনিক ও কবি ছিলেন ।১৬৭৪ খ্রি. আফগান বিদ্রোহীরা মুঘল বাহিনীকে আক্রমণ করে ।মুগল সেনাপতি সুজাত খান নিহত হন ।ঔরঙ্গজেব নিজে এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ।১৬৭৪ খ্রি. তিনি হাসান আবদালে উপস্থিত হন ।তিনি কূটনীতি ও সামরিক শক্তির দ্বারা বিদ্রোহী আফগানদেরকে দমন করতে সক্ষম হন ।কাবুলে মুঘল শাসন কর্তা আমীর খান আফগানদের দমন করেন ।পরবর্তীতে খুশহাল খান কে মুঘল বাহিনী পরাজিত করে ।
##উত্তর- পশ্চিম সীমান্ত ফলাফল:::::::::::::::::::::::::::::::::::::
(১)এই যুদ্ধের ফলে মুঘল রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে।
(২)উত্তর পশ্চিম সীমান্তের উপজাতিদের মধ্যে জাতীয় জাগরণ দেখা দেওয়ায় ঐ অঞ্চল থেকে মুঘল বাহিনীতে সৈন্য সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়ে।
(৩)এই নীতিতে ঔরঙ্গজেব উপজাতিদের দমন করার জন্য দক্ষ শ্রমিকদের প্রেরন করেন ।এই সুযোগে মারাঠা নেতা শিবাজী দাক্ষিণাত্যে নিজ শক্তি অপ্রতিহত করতে সক্ষম হন ।
এসব ফলাফল থেকে বোঝাযায়  ঔরঙ্গজেবের উত্তর-পশ্চিম  নীতির মুঘল সাম্রাজ্যর জন্য ব্যপক ক্ষতির কারন ছিল ।
ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয়নীতি:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
সম্রাট আকবরের ধর্মীয় নীতি ছিল বিতর্কিত,ঔরঙ্গজেব নীতিও ছিল বিতর্কিত।ঔরঙ্গজেব ধর্মের জন্য রাজনীতিকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন ।তার ফলে সামরিক ও কূনৈতিক প্রয়োজনে তিনি হিন্দু,বিশেষ করে রাজপুতদের আন্তরিক সহায়তা পাননি ।তার ধর্মীয় নীতির বিষয়ে অভিযোগ অভিযোগ পরিলক্ষিত হয়।
(১)জিজিয়া কর পুনরায় প্রবর্তন করেন ।
(২)চাকরিতে হিন্দু কর্মচারী  নিয়োগ বন্ধ করেন ।
(৩) হিন্দু মন্দির ধবংস করেন ।
ভারতে গোড়া সুন্নি মুসলমানদের মত ঔরঙ্গজেবের মনেও এই ধারণা বদ্ধমুল হয় যে, আকবরের শাসনকাল হতে ইসলামের পবিত্রতা বিভিন্ন ধর্মের সংস্পর্শে বিকৃত হয়ে পড়েছে।সিংহাসন আরোহণ করেই সম্রাট ইসলামের পবিত্রতা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শরিযতের বিধান অনুযায়ী কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।:::::::::::::::
(১)তিনি সম্রাট আকবর কর্তৃৃক প্রবর্তিত সৌর ইলাহী বছর বাতিল করে ইসলামী চন্দ্র মাসের গণনা পুনরায় প্রবর্তন করেন ।
(২)নব বছর উৎসব পালন বন্ধ করে দেয়া হয় ।
(৩)সম্রাটকে প্রসাদের অলিন্দে ভোরবেলায় দারিয়ে প্রজাদের দর্শন দেওয়ার যে রীতি ছিল তা বন্ধ করে দেয় হয়।
(৪)রাজদরবারে সঙ্গীত, নৃত্য,চিত্রাঙ্কন নিষিদ্ধ করা হয়।
(৫)হারেম হতে মহিলা ও খোজাদের বিতাড়িত করা হয় ।
(৬) রাজ্য মদ ও ভাঙ্গ সেবন এবং জুয়াখেলা নিষিদ্ধ করা হয়।
(৭)মুসলমানদের পীরদের সমাধিস্থলে বাতি দেওয়া নিষিদ্ধ হয় ।
(৮)  সম্রাটের সকল আদেশ পালন হচ্ছে কি না তার জন্য একজন কর্মচারী নিযুক্ত করেন ।
ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতির প্রতিক্রিয়া::::::::::::::::::::::::::::::
ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতির বিরুদ্ধে সাম্রজ্যের বিভিন্ন অংশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।ঔরঙ্গজেবের
ধর্মীয় নীতির প্রতিক্রিয়া স্বরুপ তার রাজত্বকালে জাঠ, সৎনাসী শিখ, রাজপুত ও মারাঠাগন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।
জাঠ বিদ্রোহী::::::::::::::::::::: 
১৬৬৯ খ্রি, প্রথমে মুথররার জাঠরার জাঠরা গোকলা নামে এক ভূস্বামীর নেতৃত্বে সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ।বিদ্রোহী জাঠগণ মুথরার শাসক আব্দ-উনী-নবীকে হত্যা করে ।এতে ঔরঙ্গজেব অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন এবং তিনি তৎক্ষণাৎ জাঠদের বিদ্রোহ দমন করার জন্য কয়েকজন সেনাপতিকে সৈন্যসহ প্রেরণ করেন ।মুঘল সেনাবাহিনী অতি সহজেই জাঠদের পরাজিত করে তাদের নেতা গোকলাকে হত্যা করে । কিন্তু গোকলার মৃত্যুর পরও জাঠদের বিদ্রোহ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়নি । পরে জাঠরা রাজারাম নামক অপর এক নেতার অধীনে যুদ্ধ পরিচালনা করে । অবশেষে রাজারামও মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদোধ পরাজিত ও নিহত হন । রাজরামের মৃত্যু পর তার ভ্রতুষ্পুত্র চুরমন জাঠদের নেতৃত্ব গ্রহন করেন । সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু পরও জাঠরা মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে এবং
মুঘল সাম্রাজের অনেক ক্ষতি সাধন করে ।
সাৎনামী বিদ্রোহ:::::::::::::::::::::::::::::::
পাঞ্চাবের বর্তমান পাতিয়ালা এবং মেওয়াট অঞ্চলে সাৎনামী নামে এক হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল ।
তার পেশায় ছিল কৃষক ও ব্যবসায়ী। একজন মুঘল সৈন্য কর্তৃক জনৈক সৎনামী কৃষক নিহত হলে ১৬৭২ খ্রি.তার তারা মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । সৎনামীদের বিদ্রোহ দমন করতে মুঘল
বাহিনীকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুঘল বাহিনী তাদের পরাজিত করে  ঐ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
বুন্দেলা বিদ্রোহ:::::::::::::::::::::::::::::: 
বুন্দেলাখন্ডের বুন্দেলা রাজপুতেরগণ প্রথমে চম্পত রায়ের নেতৃত্বে মুঘলদের  বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । কিন্তু পরে মুঘলদের হাতে বন্দী হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেন। তার পুত্র ছত্রসাল কিছুকাল ঔরঙ্গজেবের অধীনে কাজ করেন। কিন্তু শ্রীঘ্রই তিনি মারাঠা নেতা শিবাজীর স্বাধীনতা স্পৃহা ও 
দুঃসাহসিকতায় অনুপ্রণিত হয়ে বুন্দেলখন্ড ও মালবে স্বাদীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখন। ১৬৭১খ্রি তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সফলতা লাভ করেন । তিনি মালবে একটি ক্ষুদ্র স্বাধীনতা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেন সক্ষম হন ।
শিখ বিদ্রোহ:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
ভক্তি আন্দোলনের  একজন নেতা শুরু নানক এক নতুন ধর্ম প্রচার করেন ।এ ধর্ম শিখ ধর্ম নামে পরিচিত ।শিখদের ধর্মীয় নেতাকে গুরু বলা হয় ।শিখেরা খুবই গুরুভক্ত ।গুরুর নির্দেশে তারা কঙ্গ,কৃপাণ, কৌপীন, কেশ কাকন এই ৫ টি প্রতীক সর্বদায় অঙ্গে ধারণ করে ।শিখগুরু হররায়ের মৃত্যু পর উত্তরাধিকার নিয়ে শিখদের মধ্যে গুরুতর কোন্দল শুরু হয় । এই সুযোগে ঔরঙ্গজেব গুরু হরকিশানকে নির্বাচনে অনুমদোন করেন ।হরকিশানের মৃত্যু হলে তার পুত্র  তেগবাহাদুর শিখদের গুরু নির্বাচিত হন ।প্রথম দিকে  তিনি মুঘলদের অধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন ।পরবর্তীতে
স্বাধীন রাজ্য গঠনে  হাফিজ উদ্দীন নামে একজন মুসলমানদের সঙ্গে হাত মিলান ।কিছু সংখ্যক সশস্ত্র সন্ন্যাসী তাকে সাহায্য করে ।তাদের সাহায্য নিয়ে তেগবাহাদুর পাঞ্চাবের নিরীহ মানুষদের ঘরবাড়ি লুঠতরাজ চালান ।এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য তেগবাহাদুর ধৃতহলে তাকে দিল্লিতে এনে প্রাণদন্ড দেওয়া হয় । তেগবাহাদুেরের পুত্র গোবিন্দের অধীনে শিখেরা প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে । ঔরঙ্গজেব মৃত্যুর পর তিনি আন্দোলন চালিয়ে যার ।
ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি ::::::::::::::::::::::::::::::::
মুঘল সম্রাটদের রাজপুতনীতি ধর্মীয়নীতি সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটিকে অপরটি থেকে পৃথকভাবে দেখা খুব সহজ নয় ।রাজপুতনীতি শুধু ধর্মীয় দিক নয় এর একটি রাজনৈতিক দিকও ছিল। বাবর,হূমায়ুন ও আকবরকে পাঠান বা আফগানদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখিন হতে হয় । এমনকি কিছুকালের জন্য তারা হূমায়ুনের থেকে সিংহাসন কেড়ে নেয় ।
আকবরের আমলেই কতিপয় রাজপুত নেতা জাহঙ্গীর ও খসরুর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে  মুগল দরবারে দুটি পৃথক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা করে । শাহজাহানের রাজত্বকালেও তার পুত্রদের  মধ্যে দ্বন্দ্বে রাজপুতেরা সক্রিয়ভাবে দলগত সমর্থন দান করে এমন এক ব্যক্তিকে, যার দ্বারা তাদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি এবং স্বা হাসিল হতে পারে । এরুপ অবস্থায় ঔরঙ্গজেব অপর দলের উপর নির্ভর করতে হয়। তবে তিনি মুঘলদের ঐতিহ্যবাহী রাজপুত নীতি এক আঘাতে চুরমার করতে পারেননি । দীর্ঘ রারো বছর অতিবাহিত হওযার পর তিনি রাজপুতদের সঙ্গে সংঘর্ষে  লিপ্ত হন । হয়তো উপস্থিত কারন না থাকলে তিনি রাজপুতদের সাথে বৈরিতার পথ পরিহার করে চলতেন।।
যৌধপুরের রাজা যশোবন্ত সিংহ ১৬৭৮ খ্রি. সীমান্তে জামরুদে মৃত্যুমুখে পতিত হন । তার কোনো পুত্র সন্তান ছিল না । সম্রাট মৃত রাজার ভ্রাতুষ্পুত্র ইন্দ্রসিংকে যোধপুরের  গদিতে বসান।এদিকে যশোবন্তের 
পরিবার লাহোরে পৌছলে,তার দু মহিষী দু পুত্র সন্তান প্রসব করে । একজন মারা যায় এবং একজন  জীবিত থাকে । জীবিত সন্তানের নাম রাখা হয় অজিত সিংহ।অজিত সিংহ ও তার মাতাকে নিয়ে দুর্গাদাস নামে একজন রাজপুত দিল্লিতে পৌছেন এবং অজিত সিংহকে যোধপুরে সিংহাসনের উত্তরাধীকারি হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য সম্রাটের নিকট অনুরোধ করেন ।সম্রাট অজিত সিংহকে মুঘল হারেমে প্রতিপালনের প্রস্তাব দেন । আর অজিত রয়ঃপ্রাপ্ত হলে তাকে যোধপুরের গদিতে বসান হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন । বালক অজিতকে মুসলমান করা হবে বলে এই ভয়ে রাজপুত দুর্গাদাস যৌধপুরে পালয়ন করেন এবং ইন্দ্র সিংহকে অপসারিত করে অজিতকে সিংহাসনে বসান । দুর্গাদাস প্রতিবেশ মেবার রাজের সাহায্য কামনা করেন । মেবার রাজ তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন । সম্রাট দুর্গাদাসের এরুপ কাজের জন্য অসুন্তুষ্ট হন । তারপর সম্রাট  তার পুত্র যুবরাজ আকবরকে সৈন্য সহ যোধপুরের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দেন ।যুদ্ধে  যোধপুরের বহু শহর মুঘলদের দখলে আসে । এদিকে দুর্গাদাস মুঘল সৈন্যের চাপ সহ্য করতে না পেরে কূটকৌশলে  গ্রহণ করে যুবরাজ আকবরকে পিতার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন ।যুবরাজ আকবর আগে থেকে পিতার প্রতি অসুন্তষ্ঠ 
ছিরেল ।আকবর বিদ্রোহ করেন এবং প্রায় ৭০০০০ সৈন্য নিয়ে আজমীরের দিকে অগ্রসর হন । এতে  ঔরঙ্গজেব উদ্বিগ্ন হন । কারন তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য ছিল না । তিনি কৌশলে আকবর ও রাজপুতদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্ঠি করেন।আকবর বাধ্য হয়ে দাক্ষিণাত্যের মারাঠা নেতা শম্ভজির দরবারে পালয়ন করেন । এবার ঔরঙ্গজেব রাজপুতদেরকে আক্রমণ করেন ।উদয়পুরের রাজা ঔরঙ্গজেব নিকট সন্ধির প্রস্তাব করেন । তিনি সন্ধির জন্য প্রস্তুত ছিলেন । কারন আকবর তখন দক্ষিণে গমন করেন । তিনি উত্তর ভারতে সমস্যা আপাতত মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহী হন । রানা তিনটি ক্ষুদ্র এলাকা সম্রাটকে ছেড়ে দেন । কিন্তু যোধপুরের রাজপুতরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে । যুদ্ধে কোন ভবিষৎ নেই দেখে অজিত সিংহ সম্রাটের নিকট ক্ষমা চাই। ১৬৯৮ খ্রি.সম্রাট ক্ষমা করেন এবং তাকে যমোবন্তের উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকার করেন। দুর্গাদাসকেও ঔরঙ্গজেব ক্ষমা করেন ।
ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্যনীতি::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
ওরঙ্গজেবের শাসন কাল দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছ। প্রথম ভাগে (১৬৫৮-১৬৮১) খ্রি, পর্যন্ত উত্তর ভারতে অবস্থান করেন আর দ্বিতীয় ভাগে (১৬৫৮-১৬৮১) খ্রি. পর্যন্ত অবস্থান করেন ।সম্রাট উত্তর ভারতে সমস্যার অনেক খানি সমাধান করে ,দক্ষিণে যেতে উৎসাহীত হন।ইতোপূর্বে  সম্রাট 
দাক্ষিণাত্যের  সুবাদার থাকাকালীন তিনি কয়েকটি সমস্যা অসমাপ্ত রেখেই উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে যোগ দেয়ার জন্য অগ্রসর হন ।সমস্যার প্রথমটি ছিল মারাঠা নেতা শিবাজীর উথান এবং ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধি।অপরটি ছিল গোলকুন্ডা ও বিজাপুরের শিয়ারাজ্যে দুটির মুঘল সাম্রাজ্যভুক্তি।
ঔরঙ্গজেব ও মারাঠা::::::::::::::::::::::::::
মহারাষ্টের অধিবাসীরা মারাঠা নামে পরিচিত।ভারতের ইতিহাসে দক্ষিনে মারাঠাদের উখান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা । দাক্ষিোণাত্যের সুলতানদের অধীনে মারাঠারা চাকরি করে সামরিক দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।মারােঠাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা ছিলেন শিবাজী।ঔরঙ্গজেব দক্ষিনে থাকাকালীন শিবাজীকে দমন করার জন্য চেষ্ঠা করেছেন।ঔরঙ্গজেব সিংহাসন আরোহন করে আবার দক্ষিনের দিকে মনোনিবেশ করেন ।তিনি তার মাতুল শায়েস্তা খানকে দাক্ষিণত্যের সুবাদার নিযুক্ত করে শিবাজীর মক্তিকে দমন করার নির্দেশ দেন ।শায়েস্তা খান মিবাজীর কয়েকটি দুর্গ দখল করে সেখানে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৬৩ খ্রি. এক রাতে শিবাজী শাযেস্তা খানের শিবির আক্রমন করে তার পুত্রকে হত্যা করেন  আর  শায়েস্তা খান হাতের একাট আঙ্গুল হারিয়ে কোন রকম পালিয়ে যেতে সমর্থন হয় ।
১৬৬৪ খ্রি. শিবাজী সুরাট দুর্গ লুন্ঠন করেন ঠিক এই সময় ঔরঙ্গজেব  শিবাজী  বিরুদ্ধে যুবরাজ মুয়াজ্জম ও রাজা জয়সিংহকে প্রেরণ করেন ।মুঘল বাহিনী শিবাজীর পুরন্দর দূর্গ অবরোধ করে শেষে
শিবাজী কোন উপায় না পেয়ে মুঘলদের  সঙ্গে পুরন্দরের সদ্ধির প্রস্তাব করেন এবং ১৬৬৫ খ্রি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ।অতঃপর জয়সিংহের অনুরোধে শিবাজী মুঘল দরবারে আগমন করেন আর সম্রাট শিবাজীকে বন্দী করে কিন্তু কিছু দিন পর কৌশলে তিনি  পলায়ন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন ।ইতোমধ্যে ঔরঙ্গজেব ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বিদ্রোহ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ।সে 
সুযোগে শিবাজী নিজ রাজ্যে মুঘল  অধিকৃত অঞ্চলগুলো প্রায় সবই  পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন । কিন্তু শিবাজীর সকল উদ্দেশ্য সার্থক হয়ে উঠবার পূর্বেই ১৬৮০ খ্রি ৪ এপ্রিল ৫৩ বছর বয়সে আকস্মিকবাবে তিনি মৃত্যমুখে পতিত হন । শিবাজীর মৃত্যুর পর তার পুত্র শম্ভজী মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিযে যান ।এর পরে একের পর এক মারাঠা শাসক মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে । যা ১৭০৭ খ্রি সম্রাট ঔরঙ্গজেব মৃত্যু পর্যন্ত মুঘল মারাঠা সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল ।
বিজাপুর ও গোলকুন্ডা জয় ::::::::::::::::::::::::::::::::
দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকুন্ডার বিরুদ্ধে ও ঔরঙ্গজেব সামরিক অভিযান করেন ।এই দুটির রাজ্যর বিরুদ্ধে অবিযানের কারন শাহজাহানের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সম্রাটকে বার্ষিক কর  নিয়মিত প্রদান করেনি।তাছাড়া এ দুটি রাজ্য কেবলমাত্র মুঘলদের আজন্ম শত্র মারাঠাদের সঙ্গেই নয়, পারস্যের শিয়া সুলতানদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল ।সম্রাট ঔরঙ্গজেব ১৬৮৩ খ্রি. শাহজাদা আজমকে বিজাপুরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন । আজম বিজাপুর বিরুদ্ধে আক্রমণ করে ব্যর্থ হন।পরবর্তীতে সম্রাট নিজে এসে বিজাপুর অবরোধ করেন । বিজাপুর অবরোধ অবস্থায় খাদ্যাদিক থেকে দুর্বল হয়ে পরে । অবশেষে বিজাপুরের সুলতান সিকান্দার আদিল শাহ মুঘল বাহিনীর কছে আত্মসমর্পন করেন ।প্রায় দুই শতাব্দীর অস্তিত্বের পর বিজাপুর রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। 
বিজাপুরের পর ঔরঙ্গজেব গোলকুন্ডার দিকে দৃষ্টি দেন। গোলকুন্ডা গোপনে বিজাপুর এবং মারাঠাদের সাহায্য করেছিল। এই অপরাধে সম্রাট স্বয়ং গোলকুন্ডা অবরোধ করেন। দর্ঘী আট মাস অবরোধের পর ১৬৮৭ খ্রি. কুতুবশাহী বংশের শেষ সুলতান আবুল হাসান আত্মসমর্পন করেন। গোলকুন্ডা মুঘল সম্রাজ্যভুক্ত হয়। এভাবে বিজাপুর ও গোলকুন্ডা রাজ্য মুঘলদের অধীনে হওয়ায় দাক্ষিণাত্যে মুঘলদের এচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।।
দাক্ষিণাত্যে অভিযানের কারণ:::::::::::::::::::::::::::::::::
ঔরঙ্গজেবের দক্ষিণত্যের নীতির কারন সম্পর্কে  ঐতিহাসিক V.A SMITH ও অধ্যাপক প্রভাতাংশু মাইতী কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন।।
(১)প্রায় সকল সম্রাট দাক্ষিণাত্যে নীতি অনুসরণ করেছেন সুতরাং সম্রাট ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে নীতি অনুসরন করবে স্বাভাবিক ।
(২)ভরতের দক্ষিণে বিজাপুর ও গোলকুন্ডা রাজ্য দুটি মুঘল সম্রাজ্যর জন্য হমকিস্বরুপ ছিল। সুতরাং সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষার্থে সম্রাট অভিযান করেছিলেন।
(৩)বিজাপুর , গোলকুন্ডা এই দুই রাজ্য মুঘল সম্রাটদের নিয়মিত কর প্রদানে বিরত থাকায় রাজনৈতিক
ও প্রশাসনিক কারনে সম্রাট তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।
(৪)অনেকে মনে করেন ধর্মীয় কারনে ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে অভিযান পরিচালনা করেন ।
দক্ষিণাত্যের নীতির ফলাফল::::::::::::::::::::::::::
(১)ঔরঙ্গজেব তার দাক্ষিণত্য নীতি প্রবর্তন করতে গিয়ে অর্থের অপচয় করেন।
(২)এই নীতির ফলে রাজকোষের শূন্যতা দেখা দেবার কারনে সরকার দেউলিয়া হয়ে যায়। এ সময় সৈন্যদের বেতন অনেক বাকি পরে ।এজন্য সৈন্যরা বিদ্রোহ ঘোষনা করেন।
(৩)ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণ্য নীতির কারনে জায়গিরদারি সংকট দেখা দেয় । এতে মনসবদারগন সম্রাট প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।
(৪) সম্রাট দক্ষিণ ভারত নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে উত্তর ভারতে শাসন তার হাত থেকে দূরে সরে যায়।
সম্রাট  ঔরঙ্গজেবের শাসন ক্ষেত্রে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেবার ফলসরুপ তার দাক্ষিনাত্য নীতি বিফল হয়। এ বিফলতার জন্য তর অদূরদর্শিকতাই দায়ী।
দাক্ষিনাত্য নীতির সমালোচনা::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বিভিন্ন  ঐতিহাসিক গণরা এই বিষয়  নিয়ে সমালোচনা করেছেন।বিজাপুর ও গোলকুন্ডার ন্যায় দুইটি স্বাধীন রাষ্টের বিলুপ্তির ফলে মারাঠা মক্তিকে প্রতিহত করার মত দাক্ষিণাত্যে আর কোন অবশিষ্ট শক্তি রইল না।ঐ দুটি বিজিত রাজ্যের কর্মচ্যুত সেনাবাহিনী মারাঠাদের সহিত যোগাযোগ করে।ফলে মারাঠাদের শক্তি বহু গুনে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় । পরিশেষে, দাক্ষিনাত্যের শিয়া রাজ্যগুলির সহিত মৈত্র স্থাপত করে । মারাঠা মক্তিকে বিধ্বস্ত করার ব্যবস্থা না করেও ঐরঙ্গজেব মারাত্ম ভুল করেন।কাজেই শিয়া রাজ্যদ্বয়ের ধ্বংস সাধন করে সম্রাট অদুদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
ইংরেজ কোম্পানির সাথে ঔরঙ্গজেবের সম্পর্ক::::::::::::::::::::::::
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্রাট ঔরঙ্গজেবের শাসনমলে এদেশে তাদের শক্তি বিস্তারের সুযোগ 
পায়। অবশ্য প্রথম দিকে ঔরঙ্গজেব তাদের প্রতি অনুদান আচরন প্রদর্শন করেন । কিন্তু পরে কোম্পানি  অফিসারদের আনুগত্যে ভাব দেখে তিনি তাদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করেন ।১৬৮৬খ্রি.
ইংরেজ কোম্পানি হুগলি শহরে আগুন লাগালে সম্রাট অসুন্তুষ্ট হন । বাংলার সুবাদের শায়েস্তা খান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শান্তিভঙ্গকারীদের কঠোর শাস্তি দেন ।ফলে ইংরেজ কোম্পানি বাংলা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় । কিন্তু পরবর্তী বছর সম্রাট ইংরেজদেরকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন । জব চার্ণক ১৬৯০A.D ‍  কালিঘাট , সূতানটি, ও গোবিন্দপুর এই তিনটি গ্রাম নিয়ে কলিকাতা শহরের গোড়াপত্তন করেন।সুরাটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রেসিডেন্ট যোশিয়া চাইল্ড মুঘলদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়।কিন্তু মুঘল সৈন্যবাহিনীর চাপে যোশিয়া আত্মসমর্পণ করেন । সম্রাট তাকে ক্ষমা করেন ।যুদ্ধের ক্ষতি পূরণ দান করার পর মুঘল রাজ্য তাদের বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়া হয়।(রমজান আলী আকন্দ)
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কৃতিত্ব:::::::::::::::::::::::::::::::::
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে বহুমুখী গুণাবলি  সমাবেশ ঘটেছিল
#একজন সুদক্ষ সেনাপতি     #আদর্শ শাসক
# নিরপেক্ষ বিচারক                # সরল ও ধার্মীক
# সুচতুর ও শ্রেষ্ঠ নরপতি         #একজন দক্ষ যুদ্ধবিদ ও কূটনীতিবিদ
# অত্যন্ত পরিশ্রমী                   #প্রজানুঞ্জক শাসক 
#একজন বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী শাসক # তিনি ন্যায় পরায়ন ও কর্তৃত্ব পরায়ন ছিলেন
# সহনশীল ও সদাচরন ছিলেন        #বিলাস বিমুখতা
এই বৈশিষ্ট্য গুলো বিশ্লেষণ করা হলো:::::::::::::::::
(১)মানুষ হিসেবে ঔরঙ্গজেব:::::::::: 
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন আদর্শবাদী পুরুষ।মধ্যযুগের নৈতিক কলুষতা কখনই তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। শরিয়তে বিধান অনুযায়ী চারজন স্ত্রী তিনি গ্রহণ করেছিলেন।পোষাক-পরিচ্ছদ ও আহার্যে কোন বিলাসিতা ছিল না। মদ্যপান তিনি বর্জন করে চলতেন । তিনি রাজকীয় কোষগারকে জনগনের সম্পত্তি বলে মনে করতেন তা থেকে তিনি কিছু গ্রহণ করতেন না।সাধারন টুপি সেলাই করে এবং কোরআন নকল করে সম্রাট তার খরচ নির্বাহ করতেন ।
(২) ঔরঙ্গজেব বিদ্ধান ও বিদ্যোৎসাহী শাসক ::::::::::::::::::::::::::::::::
ঔরঙ্গজেব নিজে ছিলেন একজন বিদ্ধান ও বিদ্যোৎসাহী শাসক। তিনি ফার্সি ভাষায় যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং হিন্দি ও তুর্কি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন।কোরআন তার কন্ঠস্থ ছিলেন । তার রচিত প্রায় দুই হাজার গ্রন্থ রয়েছে। তার বিখ্যাত আইন গ্রন্থ ফতোয়া- ই- আলমগীরী।
(৩)বিলাসহীন জীবন::::::::::::::::::::::
সম্রাটের জীবনযাপন ছিলেন সম্পূর্ণ ফকিরের মতো।কোন প্রানী মাংস তিনি  কখনো ভক্ষন করেননি এবং জল ছাড়া কোন পানীয় তিনি ব্যবহার করতেন না ।ফলে তিনি কৃমকায় ও মেদবর্জিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজেকে কঠোভাবে দমন করতেন:; যেমনভাবে তিনি পাশাববর্তী লোকদেরকে দমন করতেন।
(৪)ঔরঙ্গজেব দক্ষ যুদ্ধবিদ ও কূটনীতিবিদ:::::::::::::::::::::::::::::
তিনি সামরিক বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। যৌবনে তিনি যেমন সামরিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে ও তিনি স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে সৈন্য পরিচালনা করতেন।একমাত্র কান্দাহার যুদ্ধে তিনি গোন্দাজ বাহিনীর দুর্বলতার জন্য পরাজয় বরণ করেছিলেন।কূটনীতির বলেই তিনি সকল ভ্রাতাকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। কূটনীতির মাধ্যমে রাজপুত নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে উত্তর ভারতে মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
(৫) মহান শাসক::::::::::::::::::::::
কতগুলো বিষয়ে সম্রাট ঔরঙ্গজেব তার পূর্ব পুরুষদের অপেক্ষা ব্যাতিক্রম ছিলেন ।তিনি চিত্রশিল্প মোটেই পছন্দ করতেন না। গান- বাজনও তার অপছন্দ ছিল । ফলে তিনি রাজদরবারে গান- বাজনা নিসিদ্ধ করেন। তার স্থাপত্য প্রতি অনুরাগ ছিলো না । পুত্র কন্যাদের প্রতি কঠোর ছিলেন । সকল রাজকার্য তিনি নিজে পরিচালনা করতেন। সম্রাট ৭০ বছর বয়সে চশমা না লাগিয়ে কাজ করতেন।
(৬)উদারতা::::::::::::::::::::::::::::::::::::
তৈমুর বংশীয় নরপতিগনরে মধ্যে এমনকি দিল্লি সমস্থ সুলতানগনের মধ্যে একমাত্র (সিকান্দার লোদী) ব্যতীত আর কেউই খোদাভক্তি বিলাস - বিমুখতা ও ন্যায় পরায়নতার জন্য ঔরঙ্গজেবের ন্যায় প্রসিদ্ধ ছিলেন না। তিনি প্রজাকল্যানের কথা চিন্তা করেই  ৮০ প্রকার কর তিনি মওকুফ করেছিলেন।
(৭)সম্রাটের ব্যর্থতা:::::::::::::::::::::::::::::::::
ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে সবচেয়ে বড় এুটি ছিল তিনি কাউকে বিশ্বাস করতেন না । তিনি রাষ্টীয় সকল ক্ষমতা নিহ হাতে কেন্দ্রেীয়ভূত করেছিলেন। এর ফলে মন্ত্রীর স্বাধীনভাবে কোন কর্ম সম্পাদন করতেন পারতেন না । ফলে তারা স্বাভাবিক উদ্যম হারিয়ে ফেলে।দীর্ঘকাল যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকার ফলে সেনাবাহিনীর সামরিক দক্ষতা ও হ্রাস পায়। ফলে  ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পূর্বেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে ।।।
মুঘল সাম্রাজ্য পতনের কারণ::::::::::::::::::::::::::::::
১৫২৬ খ্রি ইব্রাহিম লোদীকে প্রথম পানি পথে যুদ্ধে সম্রাট বাবর তাকে পরাজিত করে। মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।১৮৫৭ খ্রি. মহাবিদ্রোহে নেতৃত্ব দানের জন্য ইংরেজ শাসক মুঘল বংশেষ শাক দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করার সাথে সাথে মুঘল সাম্রাজ্য পতন ঘটে।মুগল সাম্রজ্যর পতন হঠাৎ করে ঘটেনি,বরং অনেক পূর্বেই সাম্রাজ্যেরর পতন বীজ বপন হয়েছিল।কিন্তু সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা হয়।
(১)উপযুক্ত উত্তরাধিকারীর অভাব::::::::::::::::::::::::::::::::: 
মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সবচেয়ে বড় কারন ছিল এর সৈরাচারী রাষ্ট্রকাঠামো।সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও অস্তিত্ব নির্ভর করতো সম্রাটের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, বুদ্ধি, কর্মনিষ্ঠা, ও সামরিক মক্তির উপর ।বাবর হতে ঔরঙ্গজেবে এই ছয়জন সম্রাট সকলেই শক্তিশালী ও প্রতিভাসম্পন্ন শাসক ছিলেন। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী সব মুঘল সম্রাইটই ছিলেন, অপদার্থ, শাসন পরিচালনায় অনুপযুক্ত,বিলাসী ও চরিত্রহীন। তারা সকলে মন্ত্রীদের হাতে রাজ্যভার ন্যস্ত করে নিশ্চিন্তে জীবন অতিবাহিত করতেন।।
(২)উত্তরাধিকার আইনের অভাব:::::::::::::::::::::::::::: 
মুঘল সাম্রাজ্যের একটি বিশেষ দুর্বলতা ছিল উত্তরাধিকার নির্বাচনের কোন সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না।এর ফলে সকল সম্রাটের রাজত্বে শেষে উত্তরাধিকার যুদ্ধ সংঘটিত হত ।একমাত্র আকবর ছাড়া প্রত্যেকেই জোর যার মুলুক তার নীতির প্রতিফলন ঘটিয়ে সিংহাসন লাভ । সুতরাং মুঘল সাম্রজ্যের পতনের জন্য উত্তরাধিকার আইনের অভাবে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
(৩)সাম্রাজ্যের বিশালতা::::::::::::::::::::::::::
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারন সম্রাজ্যর বিশালতা। সম্রাট ঔরঙ্গজেব আমলে মুঘল সাম্রাজ্য কাবুল থেকে আসাম এবং ক্শ্মীর থেকে মহীশূর পর্যন্ত বিস্তার ছিল।তৎকালীন যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যন্ত  অনুন্নত থাকায়  এই বিশাল সাম্রাজ্যকে এক কেন্দ্র থেকে সুষ্ঠু ভাবে শাসন করা ছিল অসম্ভব।
(৪)অভিজাত শ্রেণীর নৈতিক অবনতি:::::::::::::::::::::::::::::
অভিজাত শ্রেণী ছিল মুঘল প্রশাসনের মেরুদন্ড।বৈরাম খা, মহব্বত খান, সাদুল্লা, মীরজুমলা প্রমুখ অভিজাতগন ছিলেন মুঘল সম্রাজ্যের শক্তির উৎস। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী সম্রাটদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে অভিজাত শ্রেণীর অধঃপতন ঘটে। অভিজাতগনরা সম্রজ্যর ক্ষমতার আশায় নিজেরা সংঘর্ষ জরিয়ে পরে ।অনেক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
(৫)জায়গীর প্রথার সংকট::::::::::::::::::::::::::::::: 
জায়গীর বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা ভূখন্ড যা মনসবদার বা অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের নগদ বেতনের বিনিময়ে প্রদান করা হত। জায়গীরদারগন সাধারনত গ্রাম্য প্রধানের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতেন।জায়গীর প্রথা সংকট অন্যতম কারন জায়গীরের স্বল্পতা ও অভিজানের ব্যায় মাত্রা বৃদ্ধি।
(৬)কৃষক অসন্তোষ:::::::::::::::::::::::::::::::::::
মুঘল রাজস্বের মূল উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব । সম্রাট আকবর আমলে থেকে যুদ্ধ গ্রিগের জন্য কৃষকদের উপর করের বোঝা বৃদ্ধি পায়।সম্রাট ঔরঙ্গজেব সময় গৃহযুদ্ধ এবং রাজপুত ও মারাঠাদের সঙ্গে অবিরত যুদ্ধের ফলে রাজকোষ প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলে ইজারাদার নিয়োগ করে জরপ্রয়োগ করে কৃষকদের নিকট থেকে রাজস্ব আদায়ের আদেশ দেয়া হয়। ফলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
(৭)সামরিক ত্রূটি::::::::::::::::::::::::::: 
মুঘলদের সমরিক ত্রূটি বলতে মনসবদারী ব্যবস্থাকে বোঝান হয়েছে।মনসবদারী অধীনে যেসব সৈন্য থাকত তাদের কোন প্রশিক্ষণ প্রদান না করে সৈনিক হিসেবে করত ও অশিক্ষিত আনাড়ী সেনা নিয়োগ করত।আর মনসবদারগন অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করত।
মুঘল সেনাবাহিনীর অস্ত্র আধুনিক ছিল না। তাদের কামানগুলো ছিল পুরাতন এবং এত ভারী একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া ছিল রীতিমত কষ্টসাধ্য।মুঘল বাহিনী ছিল বিশাল ও আড়ম্বরপূর্ন।
(৮)নৌ-বাহিনীর অভাব::::::::::::::::::::::: 
মুঘলদের শক্তিশালী কোন নৌ-বহর ছিল না । মুঘল শাসকরা স্থল বাহিনীর জোর দিয়েছিলেন কিন্তু কোন নৌ-বাহিনী গঠন করে নি।এক মাত্র সম্রাট আকবর নৌ শক্তি গড়ে তোলেন ।সম্রাট ঔরঙ্গজেব সময় সুবাদার শায়েস্থা খান যুদ্ধ জাহাজ তৈরী করেন। সুতরাং কোন শক্তি শালী নৌ-বহর না থাকায় ইউরোপীয়রা সহজে মুঘল সাম্রাজ্য আক্রমণ করে।
(৯)বৈদেশিক আক্রমণ:::::::::::::::::::::::::: 
পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ১৭৩৯ খ্রি. ভারত আক্রমণ করে মুঘল সাম্রাজ্যে বিধ্বস্ত করে ১৭ কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যায়।আফগানিস্তানের শাসক আহমদ শাহ অবদালী মুঘল সাম্রাজ্য ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে।সর্বমেষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোকে পারভূত করে সমগ্র ভারতবর্ষে ক্ষমতা অধিকার করে ।
মুঘলদের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা::::::::::::::::::::::::::::
(১)সম্রাট:::::::::::: 
মুঘল শাসনব্যবস্থায় সম্রাটের ক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ।সম্রাটের আদেশ বা সিদ্ধান্ত আইন হিসেবে গৃহীত হত । তিনি ছিলেন সামরিক বাহিনীর প্রধান ,প্রধান বিচারক,ও ধর্মীয় প্রধান ছিলেন। গুরত্বপূর্ন রাজকর্মচারীদের নিযুক্ত পদ-উন্ন্ত, পদ-থেকে বরখাস্ত ও বদলী সম্রাটের মর্জিত উপর নির্ভর করত।
(২)মন্ত্রীগন:::::::::::::::::: 
প্রত্যেক সম্রাট তার প্রশাসন কার্য নির্বাহের জন্য একটি মন্ত্রি পরিষদ গঠন করতেন ।প্রত্যেক মন্ত্রি এক একটি বিভাগের দায়িত্ব নিয়োজিত থাকতেন।
(ক) প্রধানমন্ত্রী:::::::::::::::::
সম্রাটের পর সবচেয়ে শাসন বিভাগের প্রভাবশালী কর্মচারী প্রধানমন্ত্রী। রাষ্টের প্রতিটি বিভাগের উপর তার প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ থাকত। সম্রাট আকবর রাজত্বকালে বৈরাম খান এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
(খ)দিউয়ানি::::::::::::::::
দিউয়ানি ছিলেন অর্থ ও রাজস্ব বিভাগের প্রধান।সম্রাজ্যের অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব তার উপর অর্পিত ছিলেন।
(৩)মীর বখশী::::::::::::::::::::::: 
মুঘল কেন্দীয় প্রশাসনে দিউয়ানের পরেই ক্ষমতাবান কর্মকর্তা ছিলেন,মনসবদারদের-নিযুক্ত,সেনাবাহিনীর বেতন প্রদান,বেতন-ভতাদির রেকর্ড সংরক্ষন ইত্যাদি তার উপর ন্যস্ত ছিল।
(৪)মীর সামান:::::::::::::::::
গার্হস্থ্য বিভাগের প্রধান ছিলেন মীর সামান।তিনি রাজ-পরিবারের প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী সরবারহ ও সকল প্রকার ব্যয়ের তদারক করতেন ।
(৫) কাজী- উল-কুজ্জাত :::::::::::::::::::::::::::::
এটি মুঘল যুগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল ।যদিও সম্রাজ্যের বিচার বিভাগের প্রধান সম্রাট কিন্তু কাজী তার প্রতিনিধি হিসেবে সাম্রাজ্যের বিচার ব্যবস্থায় দায়িত্ব পালন করতেন।
(৬)সদর- উস -সুদুর::::::::::::::::::
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য বিভাগের পরিচালনার দায়িত্ব ছিল সদর-উস -সুদুর উপর।এই বিভাগের রাষ্টের কবি, সাহিত্যিক,পন্ডিতব্যক্তি শিক্ষক, আমলে,দরিদ্র,এতিমদের সাহায্য প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।
(৭)মুহতাসিব:::::::::::::::::::::::::
দুর্ণীতি দমন ও নৈতিকতা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন মুহতাসিব। কারন তাকে জনসাধরনের নৈতিক চরিত্রের দিকে লক্ষ্য রাকতে হত।
ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু:::::::::::::::::::::
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের শেষ জীবন সুখের ছিল না।দীর্ঘকাল মারাঠা জাতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত থাকার ফলে সম্রাটের দেহ ও মন ভেঙ্গে পড়ে। ১৭০২ খ্রি. বিদ্রোহী পুত্র আকবর পারস্যে মৃত্যুবরণ করেন।সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে পুত্রদের মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয়।সম্রাট সম্রাজ্যে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে পুত্রদের কাছে ভীষণ ভাবে ব্যথিত প্রকাশ করেছেন।অবশেষে ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম বৃহত্তর সাম্রজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ঔরঙ্গজেব ১৭০৭ খ্রি. ৩ মার্চ ৯০ বছর বয়েসে দাক্ষিণাত্যের আহমদনগরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।তার মৃতদেহ দৌলতাবাদে আনা হয় এবং সেখানে বিখ্যাত মুসলিম সাধক বুরহান উদ্দীননের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয়।।(END)
                                                                                                                                                                                                                                                                             
 




















 




 


                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                        





 



No comments:

Post a Comment