জো বাইডেন |
জো বাইডেনের পরিচয়ঃ
ডোমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জো বাইডেন। তার পুরো নাম রবিনেট বাইডেন জুনিয়র।তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্ক্রানটনে ১৯৪২ সালে ২০ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার পরিবার ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলো। তার পিতার নাম জোসেফ আর.বাইডেন সিনিয়র আর মাতার নাম ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান তিনি ছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় জো বাইডেন। জো বাইডেন ছিলেন একজন লেখক,আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ।
জো বাইডেনের শিক্ষা জীবনঃ
ছেলেবেলায় কথা বলতে গেলেই তোতলাতেন বাইডেন। স্কুলে ছেলেমেয়রা তাকে নিয়ে খুব মজা করত। যাদের সঙ্গে খেলতে যেতেন তারাও তাকে নিয়ে রসিকতা করত। তোতলামি কাটাতে কবিতা আবৃত্তি শুরু করেন জো বাইডেন। এক সময় তোতলামি কমে যায়। দরিদ্রতার কারণে শৈশবে নানা-নানীর বাসায় চলে যেতে হয় জো বাইডেনকে। স্কুলে খেলাধুলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে বাইডেন। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি ছোটবেলা থেকেই ছিল তার। হাইস্কুল পর্যায়েও ক্লাস লিডার ছিলেন জো বাইডেন।ডেলওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাস্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন জো বাইডেন। পরে তিনি সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে আইন পাশ করেন। ক্লাসে ৭৬ তম হয়েছিলেন জো বাইডেন।
জো বাইডেনের বৈবাহিক জীবনঃ
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় পরার সময় বসন্তের ছুটি কাটিয়ে ফেরার পথে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিলিয়া হান্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। আর প্রথম দর্শনে প্রেম। ১৯৬৬ সালেই নিলিয়া হান্টরের সঙ্গে জো বাইডেনর বিয়ে হয়।তাদের ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয় বিউ বাইডেন, রবার্ট্ হান্টার, নাওমি ক্রিস্টিনা। নিলিয়া হান্টার ভয়াভয় এব সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার মেয়ে নাওমিও দুর্ঘটনায় মারা যায়। ২০১৫ সালে তার বড় ছেলে বিউ বাইডেন মস্তিষ্কের ক্যান্সারে মারা যায়। নিলিয়াকে হারানোর ১ বছর ১৯৭৩ সালে জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন জো বাইডেন। তাদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার কাছে রাজনীতি নয় পরিবার ছিলে আগে।তিনি পরিবারের কারনেএক সময় রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।
জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবন শুরুঃ
রাজনীতির প্রতি জো বাইডেনের আগ্রহ ১৯৬১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই। তবে নিজে রাজনীতিতে আসেন আরো পরে । ডেলওয়ারের উইলমিংটনে একটি ল’ ফার্মে কাজ করেন জো বাইডেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। রিপাবলিকান নেতার ল’ ফার্মে কাজ করলেও তিনি রিপাবলিকানদের রাজনীতির আদর্শকে সমর্থন করতেন না। সে সময়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনকে সমর্থন করতেন না বলে নিজেকে স্বতন্ত্র আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ১৯৬৯ সালে এক ডেমোক্র্যাট নেতার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে যান তিনি। এর জেরেই ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিজেকে রেজিস্টার্ড করান। শুরু হয় ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন। অল্প সময়েই রাজনীতির মঞ্চে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন তিনি। পরের বছরই নিউক্যাসেল সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন বাইডেন।
কাউন্সিলম্যান হওয়ার পরপরই ১৯৭১ সালে নিজের ব্যক্তিগত ল’ ফার্মও স্থাপন করেন তিনি। তার জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা চোখে পড়ে ডেমোক্র্যাট নেতাদের। পরের বছর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বাউডেনকে মুখোমুখি করান রিপাবলিকান অধ্যুষিত এলাকায় সিনেট নির্বাচনে। বাউডেনের প্রতিপক্ষ ছিলেন সে সময়ের জনপ্রিয় সিনেটর রিপাবলিকান ক্যালেব বোগস। বাইডেনের বোন ভ্যালেরি বাইডেন ছিলেন ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। এ ছাড়া তার বাবা-মা দুজনেই বাইডেনের হয়ে প্রতিদিন প্রচারণায় ছিলেন। বাইডেনের জনপ্রিয়তা থাকলেও কেউ আশা করেনি রিপাবলিকান নেতা ক্যালেব বোগসকে তিনি হারাতে পারবেন। কিন্তু নভেম্বরেই অঘটনের জন্ম দেন বাইডেন। ক্যালেবকে হারিয়ে ডেলওয়ারের সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। মার্কিন ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর হন বাইডেন।
সিনেট থেকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পথে পা জো বাইডেনেরঃ
ডেলওয়ার তেকে মোট ৬ বার সিনেট নির্বাচিত হন জোবাইডেন। সম্মানের স্মারক হিসেবে কিছু দিনের জন্য মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান ছিলেন।কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক নীতিমালার উপর। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরুদ্ধে অস্ত্র হামলা নাকোচ করেন, বলকান অঞ্চলের সাথে তিনি শান্তি চুক্তি করেন,দারফুন হামলাই শান্তি চুক্তি করেন জো বাইডেন,প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আগ্রাসনের কট্টর বিরোধী ছিলেন।
১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি করেন জো বাইডেন। সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে কাজ করেন জো বাইডেন। অনেক ক্ষেত্রেই তার দলের নীতির সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খায়নি। তবু দলে তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে আনেন সামনে। সে সময় বারাক ওবামায় মুগ্ধ মার্কিনিরা। যে কারণে দলে এগিয়ে যান ওবামা। বাইডেনের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে ভুল করেননি ওবামা। বাইডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেন তিনি। ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান জো বাইডেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের পথে জো বাইডেনঃ
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবার আগে আরো দুইবার এই পদে দাড়িয়ে ছিলেন জো।সিনেট হিসাবে টানা জয় ডেমোক্র্যাট দলে জনপ্রিয় ছিলো জো। সমর্থকদের পক্ষ থেকেই তাকে প্রেসিডেন্ট পদে দাড় করানোর দাবি ছিলো। ১৯৮৭ সালে প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় প্রেসিডেন্ট পদে লরবেন বলে।কিন্তু সেই সময় বাইডেন হেরে যাই। তারপর তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় দরকার হয় মস্তিষ্কে অস্ত্রপচার । আবার ফুসফুসে রক্ত জমাট বাধে অস্ত্রপচার করা হয় জো বাইডেনকে।
২০০৮ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে দারান জো বাইডেন।। সেবার বারাক ওবামার জনপ্রিয়তার কাছে পরাজিত হন। কিন্তু ওবামা তাকে সেরা বন্ধু
হিসেবেই বুকে টেনে নেন। বারাক ওবামার জয়ের পর আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবাইকে অবাক করে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরের বছর মেয়াদ ফুরায় বাইডেনেরও। ২০২০
সালের নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জো
বাইডেনকেই বেছে নেন দলের নেতারা। তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই
শুরু করেন বাইডেন। ট্রাম্পের ব্যর্থতা আর খামখেয়ালিপনা তুলে ধরে বাইডেন ভোট
চেয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছে বারবার বলেছেন ঐক্যের কথা। রিপাবলিকানদের
আগ্রাসী রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাইডেন কতটা সফল হবেন সে নিয়ে অনেকের মনে
প্রশ্ন ছিল। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার
রীতি দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেসব চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই বাইডেনকে
নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হয়। এর পর নানা কল্পনাজল্পনার পর মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন।আর ভাইস প্রেসিডেন্ট হন কমলা হ্যারিস।
জো বাইডেন প্রথমে যে কাজগুলো করবেনঃ
(১) করোনার পরীক্ষা বাড়িয়ে দিবে আর মাক্স পরতে বাধ্য করবে।
(২)ডোন্টা ট্রাম্পের আইন গুলো সংস্কার করবেন।
(৩)জলবায়ু নিয়ে কাজ করবে।
(৪) বারাকা ওবামার কিছু নীতি পুনরুত্থান করবেন।
(৫) তিনি ঐক্য, সংহিতা ও বৈষাম্য নিয়ে কাজ করবেন।
(৬) তিনি সরকারি তহবিল থেকে সংখ্যালঘুদের চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
(৭) প্রশাসন ক্ষেত্রে ও পরিবর্তন আনবেন।
.
nice
ReplyDelete