সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) |
আকবর এর পিতার নাম হূমায়ুন।আর মাতা হামিদা বানু।১৫৫১ A.D আকবর গজনীর শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। আকবর ১৪ ফেব্র্রুয়ারি ১৫৫৬ A.D পাঞ্ঝাবে পিতার মৃত্যুর পর মাএ ১৪ বছর বয়েসে সিংহাসন আরোহন করেন।আর আকবর এর অভিবাক হিসাবে রাজ্য দেখাশোনা করতেন বৈরাম খান।তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বাহুবলি ও কাটাপায়ের মত।আকবর জন্ম গ্রহন করেন ১৫৪২ A.D সিন্ধু প্রদেশের অমরকোটে(বর্তমান পাকিস্থানে)।
যোধাবাঈ:::::::::::::::::::::::::::::::
আকবরের সমস্থ স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচতি যোধাবাঈ।যোধাবাঈ ছিলেন রাজপুত ঘানার রাজা ভারমালের জ্যৈষ্ঠ কন্যা।যোধাবাঈ আকবর এর রাজাপুত প্রথম স্ত্রী ।আকবরে সাথে যোধাবাঈ বিবাহ হয় ১৫৬২ সালে। যোধাবাঈ এর আসল নাম রাজ কুমারী হিরা কুমারী আর বিয়ের পর নাম ধারন করেন মরিয়ম-উজ-জামানী।যোধাবাঈ মায়ের নাম হল ময়নামতী আর বোনের নাম সুকন্যা দাস। যোধাবাঈ পরবর্তী মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের মা।।
বৈরাম এর গুরুত্বপর্ন তথ্য::::::::::::::::::::::::::::::::::
#বৈরাম খা ছিলেন মুঘল সম্রাট হূমায়ুন ও আকবরের উপদেষ্টা।
#হূমায়ুনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধেয় সভাসদ বৈরাম খা।
#বৈরাম খা জন্ম আফগানিস্তানের বাদাখশানে ১৫০১ সালে।মাত্র ১৬ বছর বয়সে বৈরাম খা মুঘল সাম্রাজ্যে যোগ দেন বাবরের সময়।
#সম্রাট হূমায়ুন তাকে খান-ই-খানান উপাধিতে ভূষিত করেন।
#তার প্রকৃত নাম বৈরাম বেগ ।
#১৫৬১ সালে গুজরাটে বৈরাম খা মারা যায়।
#বৈরাম খা এর পুত্র নাম আব্দুল রহীম খান -ই-খানা।
#১৫৫৬ A.D দ্বিতীয় পানি পথের যুদ্ধ সংগঠিত হয় বৈরাস খা ও আদিল শাহের সেনাপতি হিমু। হিমু এই যুদ্ধে পরাজিত হয়।
আকবরের সভার নবরত্মের নাম সমূহ::::::::::::::::::::::::::::
(১)তানসেন=সংগীতঙ্গ
(২)ফৈজী=শেখ আবুল ফজল এর দাতা
(৩)শেখ আবুল ফজল= বিখ্যাত গ্রন্থ রচিয়তা আইন-ই-আকবর
(৪)রাজা বীরবল=ধর্মীয় উপদেষ্টা
(৫)রাজা টোডরমল=অর্থমন্ত্রী
(৬)রাজা মান সিংহ=প্রধান সেনাপতি
(৭)আব্দুল রহীম খান-ই- খানা = ফার্সি অনুবাদক
(৮)মোল্লা -দো- পিয়াজা=গোয়ান্দা উপদেষ্টা
দ্বীন-ই-এলাহি ধর্ম::::::::::::::::::::::::::::::::::::
আকবর ১৫৭৫সালে ধর্মীয় বিষয়ে গবেষনার জন্য ফতেপুর সিক্রিতে একটি উপাসনা ঘর তৈরি করেন যা ইবাদত খানা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন ধর্মের পন্ডিতদের কথা শুনে অবশেষে সকল ধর্মের সারকথা নিয়ে তিনি ১৫৮২ সালে এই নতুন নিরপেক্ষ ধর্ম মত দ্বীন-ই-এলাহি প্রবর্তন করেন।
*আবুল ফজল এই ধর্মের সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
# মাত্র ১৮ জন ধর্ম গ্রহন করেছিল।
#এই ধর্মে মৃত্যু পূর্বে লোকজনদের খাওয়ান হত।
#এই ধর্মের সদস্যগন জন্মদিন পালন করতে হত।
#মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।
#নিচু জাতের মানুষের সাথে মেলামেশা নিষিদ্ধ ছিল।
#ভিক্ষা দিতে হত গ্রহন করতে পারতো না।
মনসবদারি প্রথা:::::::::::::::::::::::::::::::::::::
সম্রাট আকবর মনসবদারী প্রথা প্রনয়ন করেন। প্রশাসন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খলভাবে চলনা করা জন্য।মনসব কথাটির অর্থ হলো পদ । কনো নির্দিষ্ট পদ অধিকারীকে বলা হত মনসবদার।মনসবদারের সামরিকও বেসামরিক উভয়ই দায়িত্বপালন করতে হত। ১০ থেকে ১০০০০ সৈনিকের ভিত্তিতে তাদের পদমর্যাদা ঠিক করা হতে। একজন মনসবদারের অধীনে যত সৈন্য ও ঘোড়া থাকত সেই সংখ্যা অনুযায়ী তাকে তত হাজারি মনসবদার বলা হত। সাধারন ১০০০০ মনসবদার পদ কেবল মাত্র রাজ পরিবারের কোন সন্তান বা সম্রাটের বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তিকেই প্রদান করা হতো।মনসবদারদের নিয়োগ,পদোন্নতি, বদলি,সবকিছুর নির্ভর করত সম্রাটের মর্জির উপর। মনসবদাদের পুত্র সবসময় মনসবদার হতে পারতো না, যদিও যোগ্যতা থাকলে পিতার স্থলাভিষিক্ত হতে বাধা থাকত না ।
জাবতি প্রথা::::::::::::::::::::
রাজা টোডরমল জাবতি প্রথা প্রর্বতন করেন।এই ব্যবস্থা হলো সুষ্ঠ ভাবে ভূমি জরিপ, শ্রেণিকরন, এবং সরকারকে একটি নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব প্রদানের ব্যবস্থা। জমির উৎপাদিকা শক্তির ভিত্তিতে রাজস্বের হার ঠিক করা হত।উৎপাদন শাস্যের এক-তৃতীয়াংশ ছির সম্রাটের প্রাপ্য। রাজস্ব আদায় হত নগদ টাকাই। প্রাকৃতিক কোন কারনে শস্যহানি হলে ছাড়ের ব্যবস্থা ছিল। রাজস্ব নির্ধারনের জন্য জমিকে চার ভাগে ভাগ করা হত::::::::::::::::::::
(১) যে জমিতে প্রতি বছর চাষ করা হত তাকে বল হত(পোলজ)
(২)পতিত জমিকে বলা হত(পরাতি)
(৩)যে জমিতে দুই বা তিন বছর অনাবাদি থাকত তাকে বলে(চাচর)
(৪)যদি তা আর ও দীর্ঘদিন অনাবাদী থাকত তাকে বলে(বঞ্জর)
#####আকবরের সংস্কারসমুহ::::::::::::::::::::::::::::::::::
**জিজিয়া কর:::::::::::::::::::::::
ইসলামি রাষ্ট্রে ইসলামি আইনের অনুকূল স্থায়ীভাবে বসবাসরত অমুসলিমদের জন প্রতি বাৎসরিক ধার্যকৃত কর। জিজিয়া কর করদাতার সামর্থ্য অনুসারে বাৎসরিকভাবে নির্ধারিত হতো। আকবর এটা রহিত করেন , কিন্তু সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে এটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
**তীর্থকরের বিলোপ::::::::::::::::::
তুর্কি-আফগান সুলতাদের আমলে হিন্দুদের তীথৃস্থান ও তীর্থ উদযাপনের ওপর কর আদায় করা হত। ১৫৬৩ A.D আকবর যখন মথুরাতে শিকারে গিয়েছিলেন তখন একদল হিন্দু তাদের উপর অন্যায়ভাবে আরোপিত এই পুরাতন করের প্রতি সম্রাটের দৃষ্টিরআর্কষন করে । সম্রাট বলেন যে , এটা একটা অবৈধ ব্যবস্থা । তারা সেই ঘোষিত নীতি অনুযায়ী তিনি সমগ্র রাষ্ট্রে তীর্থস্থান ও তীর্থ উদযাপনের ওপর থেকে কর রহিত করেন।
**যাকাত -রহিতকরন:::::::::::::::::::::::::::::::::
জাকাত মুসলমানদের অবশ্য দেয় । জাকাত আদায় সম্পর্কে কুরানে বহুবার নির্দেশ আছে। একজন সম্পদশালী মুসলমানকে শরিয়তের নির্দেশ অনুসারে বাৎসরিক খরচ বাদে আড়াই শতাংস হারে জাকাত দিতে হয়। প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্রের শসকগন এ কর আদায় করতেন। কিন্তু আকবর যেহেতু হিন্দুদের ওপর থেকে জিজিয়া কর রহিত করেন অনুরুপ ভাবে তার শাসনকালের শেষ দিকে তিনি মুসলমানদের জাকাত দান ব্যবস্থা রহিত করেন।
**সতীদাহ ব্যবস্থার বিলোপ:::::::::::::::::::::::::::::::::
সতী অর্থ বা সহমরন ব্যবস্থা হিন্দুস্থানের একটি বহু পুরাতন ধর্মীয় বিধান। এ ব্যবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে নিজের সতীত্ব রক্ষার প্রয়োজনে মৃত স্বামীর চিতায় সহমরনে যেতে হত। আকবর এই ব্যবস্থা মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি নির্দেশ দেন যে , কারো ইচ্ছা না থাকলে তাকে সহমরনের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না। এমনকি ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সতী সতী নরুপনের জন্য তিনি বিশ্বাসী পরিদর্শক নিয়ুক্ত করেন। একবার এক রাজপুত মহিলাকে অনিচ্ছাকৃত সহমরণের হাত রক্ষা করে আকবর হিন্দু সমাজের এক দুঃখজনক ব্যবস্থার প্রতি তারা প্রবল ঘৃনার প্রমান দেন।
**বিবাহ সংস্কার:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
আকবর বাল্য বিবাহের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি মেয়ে -পুরুষের বিবাহের বয়সের সীমা নির্ধারন করেছেন। বালকের বয়স ১৬ বছর এবং মেয়ের বয়স ১৪ বছরের কম হওয়া চলবে না।কোন আমির -উমারহ তাদের সন্তানদের বাল্য বয়েসে বিয়ে দিতে পারবে না তিনি নির্দেশ জারি করেন।নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ উচ্চ হারে যৌতুক আদায় সম্রাট পছন্দ কতেন না। বয়স্ক মহিলার সাথে অল্পবয়স্ক পুরুষের বিবাহ নিষিদ্ধ করেন । এই আইনগুলো ঠিক মত পালোন হচ্ছে কিনা তার জন্য পরির্দশক নিয়োগ করেন।
**দাসত্ব প্রথার বিলোপ:::::::::::::::::::::::::::::::::::
আকবর রাজ্য কেউ পরাজিত ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানকে দাসত্ব নিগড়ে বাধাতে পারত না।তিনি এ প্রথা নিষিদ্ধ করেন। যদি কোনো গরিব ব্যক্তি অভাবের তাড়নায় নিজ সন্তানকে বিক্রয় করে তবে সে অভিভাকের আর্থিক অবস্থার ভালো হলে টাকা শোধ করে সন্তানকে ফেরত নিতে পারবে । এ মর্মে তিনি এক নির্দেশ জারি করেন।
** ভিক্ষারৃত্তি নিরোধ::::::::::::::::::::::::::::::::::::
রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি আকবর অত্যন্ত অশোভন মনে করতেন। তিনি রাজধানীর এ ভিক্ষাবৃত্তি ও ভিক্ষুক সমস্যা সমধাননের বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহন করেন । ভিক্ষুকদের তিনটি শিবিরে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সরকারি দাতব্যখানা হতে তাদের ভরনপোষন ব্যবস্থ করেন। খযেরপুর মুসলিম ভিক্ষুকদের জন্য ধর্মপুরা হিন্দুদের এবং যোগীপুরা হিন্দু যোগীদের ছিল।
**আকবরে শিক্ষা সংস্কার:::::::::::::::::::::::::::::
আকবরের শিক্ষানীতি ছিল অন্যান্য মুসলমান শাসকদের তুরনায় উদার ও উন্নতমানের । তার সময় প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ছিল । একজন শিশু প্রথমে ফার্সি অক্ষর পৃথক ভাবে শিক্ষা করত। অক্ষর পরিচয় সম্পন্ন হলে তাকে যুক্তাক্ষর শিক্ষা দেয়া হত। বর্ণ পরিচয় ও যুক্তক্ষর শিক্ষা শেষ হলে শিক্ষার্থীকে সহজ সরল নীতি ও ধর্মীয় শিক্ষামূলক গদ্য পড়তে দেয়ার রেওয়াজ ছিল। উচ্চ শ্রেনীতে নিম্নলিখিত বিষয় গুলো শিক্ষা দেয়া হত::;: নীতিশিক্ষা , অঙ্ক, হিসাব লিখন প্রণালী, জরিপ প্রনলী, কৃষিবিদ্যা, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, অর্থবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, ধর্ম ও ইতিহাস প্রভতি।
আকবর শিক্ষা সংস্কারের ফলে স্কুলসমূহ এক নতুন রুপ ধারন করে এবং কলেজে নতুন রূপ ধারন করে এবং কলেজসমূহ সম্রাজ্যর আলোকবর্তিকা ও অলঙ্কারে পরিনত হয়। হিন্দু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহন করত ব্যাকরন বেদান্তর এবং পতঞ্জলি দর্শন। আবুল ফজল বর্ণিত ২১ জন শিক্ষত লোকের তালিকা মধ্যে ৯ জন ছিল হিন্দু ।।
**এলাহি সন প্রবর্তন:::::::::::::::::::::::::::::::
সম্রট আকবর ভারতে একটি নতুন দিনপঞ্জি প্রবর্তন করেন। নানা প্রকার দিন- তারিখ পরিত্যাগ করে একটি নিদিষ্ট ও নিয়মতান্ত্রি ক দিনপঞ্জি প্রবর্তনই এর উদ্দেশ্য ছিল । এ দিনপঞ্জিতে হিজরি সন বাদ দিতে চেয়েছেন আবুল ফজল উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুসলমানরা অসন্তুষ্ঠ হয় ভয় ছিল। তবে তিনি ধরনা করতেন দিন তারিখ পাথিব কাজেকর্মের জন্য এর ধর্মের সাথে এর কোন মিল নেই। আকবর ৯৯২ হিজরি সনের জন্য অপেক্ষা করেন কারন এই সময় হিজরি সহস্র বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মনে নতুন চিন্তা ধারার বিকাশ ঘটে । তিনি এই সুযোগে ফত্তাহ উল্লাহ সিরাজী পারস্যের সুলতান উলুঘ বেঘের জ্যেতিষ তালিকা সংশোধন করে একটি নতুন পঞ্জিকা প্রস্তুত করেন। এর নাম করন করা হয় তারিখ-ই-এলাহি ( the mightry era)। এর দিন ও মাস সৌর হিসেবে নির্নীত হয়। প্রত্যেক মাস ৩০ বা ২৯ দিনে গঠিত ছিল।।
আকবরের রাজপুত নীতি::::::::::::::::::::::::::::
আকবরের রাজপুত নীতি একটি অপরিকল্পিত আকস্মিক আবেগের ফল নয়। অতীতের তিক্ত ইতিহাস ,বর্তমানের নানাবিধ ঘটনার সম্যক উপলদ্ধি এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের সুনিচিন্তিত পরিকল্পনার ফল তার এ রাজপুত নীতি। মধ্য এশিয়ার আত্মীয়স্বজনের বৈরিতার ফলে তার পিতামহ বাবর ভারতে নিজ বংশের জন্য একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পিতা হূমায়ুন, আত্মীয়স্বজন ও আপন ভাইদের বিরোধিতা ও অসহযোগিতার জন্য নানাভাবে বিপর্যস্ত হন । আফগানরা কোনো সময়ই মুঘলদের সুনজরে দেখেনি। আকবর যখন সিংহাসন লাভ করেন তখন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থারও কোন পরিবর্তন দেখেনি। এরূপ পরিস্থিতিতে আকবর একটি স্থায়ী জাতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে এবং চিরবৈরী আফগান ও আত্মপরায়ন অনুগামী সৈন্যদের শক্তি ঔদ্ধত্য প্রশমনের উদ্দেশ্যে রাজপুত নীতি নির্ধারণ করেন। রাজাপুতেরা ছিল সাহসী যোদ্ধা।তাদের সহযোগিতা ছাড়া ভারতের তারা রাজ্য সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না এ কথা তিনি ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন।।
####আকবরের বাংলায় অভিযান:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
**আকবরের বাংলা আক্রমন:::::::::::::::::::::::::::::::::::
আকবরের বাংলাদেশের আক্রমনের পূর্বে সোলায়মান করবানী বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শাসনকর্তা ছিলেন । সোলায়মান করবানী স্বাধীন সুলতান হলেও প্রতিবেশী মুঘল গর্ভনর খান জামান ও বৈরাম খান -এর নিকট উপঢৌকন প্রেরন করে আকবরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন । তিনি খুতবায় আকবরের নাম পাঠ করেন।
১৫৭২ A.D সোলায়মান করবানী মৃত্যুর পর তার জ্যৈষ্ঠ পু্ত্র বায়াজিদ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু আফগান সামান্তরা অল্পদিনের পর তাকে হত্যা করে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা দাউদ করবানীকে সিংহাসনে বসান।
দাউদ ছিলেন অপরিনমদর্শী । পিতার সঞ্চিত ধনসম্পদ তার মাথা বিগড়ে দেয়। তিনি পিতার নীতি বরখেলাপ করে আকবরের আনুগত্য অ-স্বীকার করেন এবং নিজ নামে খুতবা পাঠ করেন। এমনকি নিজের প্রচুর শক্তি অধিকারী মনে করে আকবরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতায় অবতীর্ন হন। তিন আকবরের সেনাপতি খান জামান কর্তৃক নির্মিত জামানিয়া দুর্গ দঘল করেন।।
**দাউদ করবানীর বিরুদ্ধে সম্রাট আকবরের -এর অভিযান::::::::::::::::::::::::::::::::::
দাউদ খান যখন পাটনা দুর্গের অবস্থান করছিলো ।তখন সম্রাট আকবর গুজরাট প্রত্যাবর্তন করে বহু সৈন্য ও রসদপত্র নিয়ে দাউদ খানকে শাস্তিদানের জন্য প্রবল বর্ষকালে রওনা হন। সম্রাট আকবর ১৫৭৪ A.D পাটনায় পৌছায় । দাউদ করবানী মুঘরদের সাথে পারবেনা বুঝে পাটনা দর্গ হতে পালিয়ে নৌকাযোগে বাংলায় চলে যান। আকবর সহজে পাটনা দুর্গ দখল করেন।
সম্রাট আকবর মুনিম খান -কে বাংলার গবর্নর নিযুক্ত করেন ও ২০ হাজার সৈন্য তাকে অর্পন করেন। মুনিম খানের অধীনে রাজা টোডরমলসহ বিশিষ্ট কয়েকজন অফিসারকে রেখে আকবর রাজধানী দিল্লির দিকে ফিরে যান । এ সময় বেনারস চুনার সরাসরি মুঘলদের অধীনে আসে। আর মুমিন খান বাংলার রাজধানী তান্ডর দিকে অগ্রসর হন। পথে তিনি মঙ্গের ভাঘলপুর, কলগাও ,তেলিয়াগড়ির পথ অতিক্রম করে বিনা প্রতিবন্ধকতায় তান্ডায় পৌছে।মুঘল বাহিনীর বাধাদানে সম্ভব নয় মনে করে দাউদ সাতগাও হয়েও উড়িষ্যা পালয়ন করে।
**তুকারয়ের যুদ্ধ ও দাউদের আত্মসম্র্পন:::::::::::::::::::::::::::::::
তান্ডায় পৌছে মুঘল বাহিনী বিশ্রাম গ্রহন করনে মনস্থ করেন। কিন্তু রাজা টোডরমল কিছু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তিনি উড়িষ্যার দিকে অগ্রসর হন । রাজা টোঢ়রমল -এর সাথে বৈরাম খান এর পুত্র আব্দুল রহীম খন-ই-খানান এর স্ব-সৈন্য তার সাথে যোগ দেন। ১৫৭৫ A.D তুকার নামক স্থানে দুই পক্ষে ভীষন যুদ্ধ হয় যুদ্ধে দাউদের বাহিনী সম্পূর্ন পরাজিত হয় । দাউদ উড়িষ্যার রাজধানী কটক দূর্গে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে দাউদ ও তার সেনাপতিরা মুঘল সেনাপতির নিকট আত্মসম্র্পন করে। রাজা টোডরমলের আপত্তির সত্ত্বেও প্রধান সেনাপতির মুমিন খান দাউদের প্রতি অধিক উদারতা প্রদর্শন করেন এবং তাকে উড়িষ্যা শাসনের অনুমতি দেন।
**রাজমহল যুদ্ধ::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
সেনাপতি মুনিম খানের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আকবর পাঞ্জাবের গর্ভনর খান জাহানকে(হোসেন কুলি খান) -কে বাংলার রাজ প্রতিনিধি ও রাজা টোডরমলকে হোসেনকুলি শিয়া ছিলেন বলে প্রথম মুঘল বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হলেও পরে টোডরমলের পরে টোডরমলের প্রচেষ্টায় সেই প্রতিকূলতা দূরভীত হয়।
আকবরের নির্দেশে বিহারের শাসনকর্তা মুজাফর শাহ খান জাহানের সাথে যোগ দান করেন। মিলিত বাহিনী গরুত্বপূর্ন তেলিয়াগরের সড়ঙ্গ দখল করে রাজমহলে শিবির স্থাপন করেন । মুঘল সেনাপতি শীঘ্রই দাউদকে আক্রমন করার সিদ্ধন্ত গ্রহন করেন। ১৫৭৬ A.D দুই বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে দাউদ বন্দি হয়। তান্ডায় তার শিরশ্ছেদ করে আকবরের নিকট পাঠান হয় ।দাউদদের পরাজয়ে বাংলার স্বধীনতা রুপ্ত হয়। খান জাহান গভর্নর করেন।।
আকবরের চারিত্র ও কৃতিত্ব::::::::::::::::::::::::::::::
দোষ ও গুনের সমন্বয়ের মানুষের চরিত্র গঠিত। দির্দোষ নিষ্কলু মানুস পৃথিবীতে বিরল । অতি মানব বা মহামানব হিসেবে ভক্তের যাদের সম্মান দেয় বিরোধী মতাবলম্বীরা তাদের চরিত্রে নানা কলঙ্ক লেপন করে।কলঙ্ক রটিয়ে তাদের মহত্ত্বকে, অতিমানবোচিত গুণাবলিকে খাটো করে। এমতাবস্থায় একজন সম্রাট হিসেবে ,মানুষের শাসক হিসেবে আকবরের দোষ-গুন-দুই ছিল এ কথা অস্বীকার করা যায় না। যদিও কেউ কেউ তাকে অতিমানব হিসেবে কল্পনা করার চেষ্টা করেছেন । কিন্তু তা সম্পূর্ণভবে সার্থক হয়েছে বলে মনে হয় না । কেউ বলেছেন রাজর্ষি, কেউ বা দিল্লিশ্বর জগদীশ্ব। অপর পক্ষে কেউ তার চরিত্র, তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চিন্তাধারায় বহু দোষ দেখতে পয়েছেন। অতএব দুয়ের মাঝামাঝি সীমায় থেকে ভোননোয়েরের কথা বলা যায়, কিছু দোষ থাকা সত্ত্বে কিলোপোয়েমেনকে গ্রিকরা সেই যুগের সন্তান এবং শেষ জাতীয় বীর হিসেবে ভালবাসে। কিলোপোয়েমেনকে মতো আকবরেরও দোষ ছিল এবং তারাই মতো আকবরও ভারতের সত্যিকার শেষ শ্রেষ্ঠ সম্রাট হিসেবে ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।।
সর্বকালে শ্রেষ্ঠ সম্রাট ;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
শুধু এশিয়ায় কেন সারা বিশ্বের সকল যুগের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ও মানুষের নেতার পঙক্তিতে স্থান পাওয়া অধিকারী ছিলেন সম্রাট আকবর। তিনি রাষ্ট্রকে সুসংবদ্ধ করেছিলেন, মানুষের শান্তির নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। এ কারনে তিনি শুধু ভারতের সিংহাসনে হয়, ভারতের মানুষের মনের সিংহাসনেও স্থান লাভ করেছিলেন। ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা করে তিনি মানুষের মনে সিংহাসনে ও স্থান লাভ করেছিলেন। এ কারনে ভারতবাসীর তাকে শ্রদ্ধা করত, ভয়ও করত। সবকিছু বিবেচনা করে এ কথা বলা যায় যে, আকবর ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে একজন।
আকবরের মৃত্যু:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
আকবরের শেষ জীবন শান্তিময় ছিল না । পুত্র মুরাদ ও অকালমৃত্যু , একমাত্র জীবিত পুত্র সেলিমের বিদ্রোহ এবং তাকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যত্ন্র ছিল আকবরের অশান্তির কারন। আকবর উদরাময় রোগে আক্রান্ত হন । রাজ চিকিৎসক হাকিম আলী সম্রাটের রোগ নিরাময় করতে ব্যর্থ। শেষ যাত্রা মনে করে সম্রাট সেলিমের সকল অপরাধ ক্ষমা করেন।তারপর সেলিমকে উত্তরাধিকারী বলে ঘোষনা করেন। অবশেষ ১৬০৫ সালে মারা যান। তারই নির্মিত সিকান্দ্রর সমাধিসৌধে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।।
No comments:
Post a Comment