Breaking

Tuesday, 16 April 2019

ন্যায়পাল/তৃতীয় বিগ্রহ পাল ও দ্বিতীয় মহীপাল এর রাজত্বকাল

#ন্যায়পাল (১০৪৩ -১০৫৮ খ্রি):::::::::
১ম মহীপালের মৃত্যুর পর তার পুত্র ন্যায়পাল ১০৪৩ খ্রি.  সিংহাসনে বসেন। ন্যায়পাল পাল সাম্রাজ্যে ১৫ বছর রাজত্ব করছে।ন্যায়পালের ১৫ বছরের রাজত্বের  ইতিহাসে শান্তি পূর্ন ছিল না। ন্যায়পালের রাজত্বকালে দীর্ঘসময় ধরে কলচুরিরাজ গাঙ্গেয়দেবের পুত্র লক্ষ্মীকর্ণের সঙ্গে যুদ্ধ ও সধ্নির ঘটনার অতিবাহিত হয়েছে।
যুদ্ধ ও সদ্ধি::::::::ন্যায়পাল রাজত্ব কালে কলচুরিরাজ কর্ন বা লক্ষীকর্ন পাল সাম্রাজ্যে আক্রমণ করেন। কলচুরিরাজ কর্ন মগধ ও বিহার আক্রমণ করে ন্যায়পালকে পরাজিত করেন।এর পর কলচুরিরাজ কর্ন আরো সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকেন।যুদ্ধে ন্যায়পাল পরাজিত হলেও তিনি তার রাজধানী রক্ষা করতে পেরেছিলেন। কর্ণ রাজধানী দখল করতে না পেরে  ক্রদ্ধ হয়ে পার্শ্ববর্তী বৌদ্ধ মন্দিরসমূহের ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকেন এবং অসংখ্য ধনসম্পদ লুন্ঠন করেন।পরবর্তীতে ন্যায় পাল শক্তিসঞ্চয় করে কর্নের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করে।কর্ণ েএবার পর পরাজিত হয়ে দীপঙ্কর এর নিকট আশ্রয় নেন। দীপঙ্কর ছিলেন মগধে একজন খ্যাতিমানপ্ প্রসিদ্ধ বৌদ্ধচর্যা। দীপঙ্কর এর অনুরোধে ন্যায়পাল ও কর্নের মধ্যে সন্ধির বন্ধোবস্ত করেন। ন্যায়পাল বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে দীপঙ্ক এর মীমাংশ প্রস্তাবে সাড়াদিয়ে সন্ধি স্পাপন করেন। সন্ধিগুলো হল ::; লুন্ঠন দব্য ফিরিয়ে দেবে,কর্ণ নিজের দেশে ফিরে যাবে, ন্যায় জীবিতকালীন কর্ন মগধে আসবে না।
#তৃতীয় বিগ্রহপাল (১০৫৮-১০৭৫ খ্রি):::::::::::::::::
নয় বা ন্যায়পালের মৃত্যু পর তার পুত্র তৃতীয় বিগ্রহপাল  সাম্রাজ্য তথা গৌড়-মগধ-বঙ্গের সিংহাসনে আরোহণ করেণ । তিনি প্রায় ১৬ বছর রাজত্ব করেন।তিনি খুব সম্ভবত পাল রাজবংশের দ্বাদশ রাজা ছিলেন।ন্যায় পালের সময় কলচুরিরাজ গাঙ্গেয়দেবের পুত্র কর্ণ বঙ্গদেশ আক্রমণ করে এবং এই যুদ্ধে ন্যায়পাল পরাজিত হন।কিন্তু অতীশ দীপঙ্গর এর মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি করেন।কিন্তু কর্ণ পুনরায় বঙ্গদেশ আক্রমণ করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ অধিকার করেছিলেন।কিন্তু পরে তিনি ৩য় বিগ্রহ পালের  কাছে পরাজিত হয়। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত থেকে জানা যায় যে তৃতীয় বিগ্রহপালের সাথে কর্নের কন্যা যৌবনশ্রীর বিবাহ হয়। সম্ভবত এই বৈবাহিক সম্বন্ধ দ্বারা উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হয়।
কলচুরিদের সাথে ন্যায়পাল এবং তৃতীয় বিগ্রহপালের দীর্ঘকালীন যুদ্ধে পালদের অর্থের.সৈন্য সামন্তদের ব্যাপক  ক্ষতির স্মখিন হয়। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।
এর মধ্য উল্লেখযোগ্য কিছু রাজ্য হল::::::::::::::::::
(১) মহামান্ডলিক ইশ্বর ঘোষ বর্ধমান জেলার ঢেক্করিতে একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলে নিজেকে মহারাজাধিরাজ হিসেবে ঘোষণা করে।
(২)পালরাজা ন্যায়পাল সময় থেকেই শূদ্রক গয়ার পাশ্ববর্তী অঞ্চলে প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন।
(৩)মগধে মান বংশের রাজগন মগধের উপাধি ধারণ করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন।
বৈদেশিক আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতার কারণে পাল সাম্রাজ্যে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে।ফলে এ সময় পাল সাম্রজ্যে অনেক সংকুচিত হয়ে পড়ে।পূর্ববঙ্গ,পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ পালদের হাতছাড়া হয়ে যায়। মগধেও তাদের শাসন ছিল নামে মাত্র।
#দ্বিতীয় মহীপাল (১০৭৫-১০৮০ খ্রি.):::::::::::::::::::::::
দ্বিতীয়  মহীপালের পরিচয়::::::::::::::::::তৃতীয় বিগ্রহপালের  জ্যৈষ্ঠ পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল।তৃতীয় বিগ্রহপালের দুই স্ত্রী ছিল।প্রথম স্ত্রী রাষ্ট্রকূট বংশীয় রাজকুমারী।তার তিনজন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মহিপাল সর্বজ্যৈষ্ঠ।আর দুজন ছিল ২য় শূরপাল ও রামপাল। ২য় শূরপাল ও রামপাল পরবর্তীতে ২য় মহীপাল সিংহাসনে বসেন।তৃতীয় বিগ্রহপালের দ্বিতীয় স্ত্রী কলচুরিরাজ বংশের রাজকন্যা যৌবনশ্রী।তার গর্ভে কোন সন্তান ছিল কিনা এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।২য় মহীপালের ৫ বছর রাজত্ব কালে পাল সম্রাজ্য আন্তর্বিদ্রোহ ও বৈদেশিক আক্রমণ বিপর্যস্ত, সংকুচিত ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় মহীপালের অনুজ ভ্রাতাদের সঙ্গে সিংহাসন নিয়ে সংঘর্ষেজড়িয়ে পড়েন।বরেন্দ্র সামন্ত বিদ্রোহ দেখা দেয়।সামন্তগন কৈবর্ত নায়ক দিব্বোকে নেতা নির্বাচিত করে তাকে বরেন্দ্র সিংহাসনে বসান।কৈবর্তবিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে মহীপালকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।এই ভাবে সামন্তদের সহযোগিতায় বরেন্দ্র কৈবর্ত শাসনের উদ্ভব হয়।
#বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহ::::::::::::::
দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালের প্রধান ঘটনা বরেন্দ্র সামন্ত বিদ্রোহ।এই বিদ্রোহকে ইতিহাসে বাংলার কৈবর্ত বিদ্রোহ বা বরেন্দ্র বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
কৈবর্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে জনানর অন্যতম প্রধান উৎস হলো সন্ধাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য। হরপ্রসাদ শাস্ত্রে কৈবর্ত বিদ্রোহ অন্যতম দুটি কারণ ছিল। (ক) দ্বিতীয় মহীপাল অত্যাচারী রাজা ছিলেন। তার অত্যাচারমূলক শাসনের কারনে জনমত অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এই পরিস্থিতে কৈবর্ত নায়ক দিব্বো  বিদ্রোহ ঘোষণা করে।(খ) দ্বিতীয় মহীপাল অত্যন্ত যুদ্ধবাজ রাজা ছিলেন। তিনি সর্বদায় মন্ত্রিগনের পরামর্শ বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতেন।যার ফলে কৈবর্ত বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়।সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত কাব্য বর্ননা অনুযায়ী,দ্বিতীয় মহীপাল ছিলেন সন্দেহ ব্যক্তি/গুজব বিশ্বাসী। অহেতুক সন্দেহবশত তিনি শূরপাল ও রামপালকে বন্দি করেছিলেন।রামচরিত কাব্য আরো বলেন দ্বিতীয় মহীপালকে শঠ,নির্দয়,অত্যাচারী, দুর্নীতি পরায়ণ প্রভৃতি বিশ্লেষণ বিশেষিত করেছেন।
#কৈবর্ত জাতি ও দিব্বোকের পরিচয়:::::::::::::::::::
*কৈবর্ত জাতি:::::::::::
কৈবর্ত জাতি অধিকাংশ মানুষ মৎসজীবী বা জেলে ছিল। কৈবর্তদের অনেক শিক্ষ-দীক্ষায়ও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। কৈবর্ত জাতি জাতি পাল আমলে অনেকেই তাদের দক্ষতা ও কৃতিত্ব দিয়ে সেনাবাহিনী তথা রাজকীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করে নিয়েছিলেন।যেমন কৈবর্ত নায়ক দিব্বো বরেন্দ্র ভূমি অধিকার করেন।
*দিব্বোর পরিচয় সংক্রান্ত::::::::
বরেন্দ্র রাজা দিব্বোকে উথান নিয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।পাল বংশের রাজা তৃতীয় বিগ্রহপাল মৃত্যু েপর তার পুত্র ২য় মহীপাল সিংহাসনে আরোহণ করেণ।২য় মহীপাল শাসক হিসেবে-অত্যাচারী,যুদ্ধবাজ ,সন্দেহ প্রবনতা সৃষ্টি, গুজব বিশ্বসী ছিলেন এবং অযোগ্যতা শাসক, হঠকারী, ফলে এই সম্স্ত বৈশিষ্ঠ কারনে জনমত, মন্ত্রি দের সাথে বিরুদ্ধে সৃষ্ঠি হয়। রাজ্যজুরে শাসনতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে থাকে।বরেন্দ্র সামন্ত বিদ্রোহ দেখে দেয়। ২য় মহীপাল মন্ত্রীদের এর পরামর্শ গ্রহন না করে সামন্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লিপ্ত হন। যুদ্ধে দ্বিতীয় মহীপাল পরাজিত ও নিহত হন। তার মৃত্যুর পর দিব্বো নামে তারই একজন উচ্চ রাজ কর্মচারী বরেন্দ্র ভূমি অধিকার করেন এবং নিজের শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। দিব্য যেভাবে বরেন্দ্র দখল করে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন তাতে মনে হয় যে তার সামন্তগনদের চক্রের গোপন সম্পর্ক ছিল।
#দিব্বোক রাজবংশের শাসন (১০৮১-১১০ খ্রি)::::::::::::::
কৈবর্ত নায়ক ছিলেন দিব্বো। দ্বিতীয় মহীপালের আমলে বরেন্দ্র সামন্তবিদ্রোহ দেখা দেয়।সামন্তগনরা কৈবর্ত নায়ক-কে নেতা নির্বাচন করে বরেন্দ্র সিংহাসনে বসান।দিব্বো বরেন্দ্র কয়েক বছর শাসন করেছে।দিব্বোক অত্যন্ত শক্তিশালী রাজা ছিলেন। দিব্বোক সময় কালে দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ বর্মন বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় জাত বর্মার নেতৃত্বে। পরবর্তী দিব্বো ও জাত বর্মান সংঘর্ষ হয়। ধারনা করা হয় যে, এ সংঘর্ষে রাজা দিব্বোকে প্রথম দিকে বিজয়ী হলেও শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেন নি। সংঘর্ষে এক পর্যায় তিনি হেরে যান। দিব্বোক পালরাজা রামপাল -এর সাথে সংঘর্ষে জয় লাভ করেছিলেন। দিব্বো উত্তর বাংলার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেও নিশ্চিন্তে রাজ্য ভোগ করতে পারেন নি। কিছুদিন জাতবর্মা ও পাল বংশের রাজা রাম পাল বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বরেন্দ্র রাজ্য শাসন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এ সফলতার পরবর্তী কৈববর্ত উত্তরাধিকারীরা ধরে রাখতে সক্ষম হন নি।রাজা দিব্বোকের মৃত্যুর পর তার ভাই রুদোক বরেন্দ্র সিংহাসনে আরোহণ করে। রুদোকের মৃত্যুর পর তার পুত্র ভীম কৈবর্ত সিংহাসনে আরোহণ করেন।

No comments:

Post a Comment